Image description

হামাস যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে এই অজুহাতে মঙ্গলবার গাজায় নতুন করে দফায় দফায় ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী।

গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, এসব হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় গাজার বুরেইজ শরণার্থী ক্যাম্পে একটি বাড়িতে পাঁচজন, গাজার সাবরা এলাকায় একটি ভবনে চারজন এবং খান ইউনুসে একটি গাড়িতে পাঁচজন নিহত হন। হামলা বুধবার ভোর পর্যন্ত চলে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে হামলার বিষয়ে মন্তব্য করেনি। সামরিক এক কর্মকর্তা জানান, হামাস গাজার ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত একটি এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালিয়েছে, যা স্পষ্টভাবে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের শামিল।

গত ১০ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলে হামলার পর দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে এই চুক্তি করা হয়। উভয় পক্ষই এরপর থেকে একে অপরের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ করে আসছে।

মঙ্গলবার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়, রাফাহ শহরে হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর গোলাগুলি হয়। হামাস এ ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে এবং জানায়, তারা এখনো যুদ্ধবিরতির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ।

নেতানিয়াহু জানান, হামাস যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করেছে ইসরায়েলি বন্দিদের মৃতদেহ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়ায় ভুল অবশিষ্টাংশ হস্তান্তর করে। পরে হামাস জানায়, তারা মঙ্গলবার একটি নিখোঁজ বন্দির দেহ হস্তান্তর করতে চেয়েছিল, কিন্তু ইসরায়েলের ‘চুক্তি লঙ্ঘনের’ কারণে তা স্থগিত করা হয়েছে।

রাতের দিকে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেড দাবি করে, তারা গাজায় অনুসন্ধান অভিযানের সময় দুই ইসরায়েলি বন্দির মৃতদেহ উদ্ধার করেছে।

চুক্তি অনুযায়ী, হামাস জীবিত সব বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে এবং বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়েছে। একই সঙ্গে ইসরায়েলি সেনা অভিযান স্থগিত করেছে। এখনো উদ্ধার না হওয়া নিহত বন্দিদের দেহ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে হামাস, যদিও তারা বলছে—গাজার ধ্বংসস্তূপে দেহগুলো খুঁজে পেতে সময় লাগবে।

গাজা নগরে এক হামলায় শিফা হাসপাতালের পাশে একটি ভবনে চারজন নিহত হন। হাসপাতালটিও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্মকর্তারা। এছাড়া জাওয়ায়দা এলাকায় একটি তাঁবুতে হামলায় দুইজন আহত হয়েছেন।

মিশর থেকে ভারী যন্ত্রপাতি আসার পর থেকে গত কয়েকদিন ধরে বন্দিদের দেহ উদ্ধারে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। খান ইউনুস ও নুসেইরাতে টানেল খোঁড়ার কাজ চলছে, যেখানে অনেক দেহ পাওয়া যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং আরও কয়েক হাজার নিখোঁজ রয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১,২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে গাজায় বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়। সূত্র: রয়টার্স।