সাত মন তেল পুড়ল, কিন্তু রাধা নাচল না। ঢাকঢোল পিটিয়ে, ধুমধাম ও বিপুল খরচ করে অনেক আশা জাগিয়ে মেঘের মধ্যে রাসায়নিক ছড়িয়ে বৃষ্টি ঝরানোর চেষ্টা চালানো হলেও সব বিফলে গেল। বৃষ্টিস্নাত হলো না রাজধানী দিল্লি।
অথচ এ জন্য দিল্লির বিজেপি সরকার খরচ করল ৩ কোটি ২১ লাখ রুপি। কানপুর আইআইটি বলছে, বৃষ্টি হয়তো হয়নি, কিন্তু অনেক বৈজ্ঞানিক তথ্য তারা সংগ্রহ করতে পেরেছে।
কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরিয়ে রাজধানীর তীব্র দূষণের মাত্রা কমাতে ব্যর্থ হওয়ার পর সমালোচনার মুখে পড়েছে বিজেপি সরকার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে সাময়িক উপশমের পথে না হেঁটে সরকার বরং দূষণের উৎসে নজর দিক। যেসব কারণে প্রতিবছর হেমন্তের শুরু থেকে পুরো শীত মৌসুম দিল্লি বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে, সেই কারণগুলো বন্ধ করা হোক। এভাবে কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরিয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা জলে ফেলার দরকার নেই।
দীপাবলির সময় বাজি পোড়ানো বন্ধ করতে পারেনি দিল্লির কোনো সরকারই। তবু আগের আম আদমি পার্টি (এএপি) সরকারের একটা চেষ্টা ছিল। চেষ্টা ছিল পরিবেশ আন্দোলন কর্মীদেরও। নানাভাবে চেষ্টা হয়েছিল মামলা করে বাজি পোড়ানো বন্ধের। সেই প্রচেষ্টা জন্ম দিয়েছিল দূষণহীন বাজির। তৈরি হয়েছিল ‘গ্রিন ক্র্যাকার’। যদিও তার আড়ালে দেদার বিক্রি হয়ে এসেছে দূষণকারী বাজিও। ফলে দূষণ সৃষ্টি হয়েছে যথারীতি।
দিল্লিতে ক্ষমতাসীন হয়ে বিজেপি সরকার সেই প্রচেষ্টাতেও জল ঢেলেছে। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো বাজি পোড়ানোর সঙ্গে সনাতন ধর্মকে জুড়ে প্রচার শুরু করে দেয়, যারা বাজি বন্ধের উদ্যোক্তা, তারা সনাতন ধর্মবিরোধী। সেই প্রচার প্রভাব ফেলেছিল কি না অন্য কথা, দেখা গেল সুপ্রিম কোর্টও পুরোপুরি বাজি নিষিদ্ধ করতে পারলেন না। ফলে প্রতিবছরের মতো এবারও দিল্লির আকাশ-বাতাস দীপাবলির পর ঢেকে গেল গভীর ধোঁয়ার আস্তরণে। দূষণ হয়ে দাঁড়াল মাত্রাছাড়া।
এই দূষণ থেকে নিস্তার পেতেই কৃত্রিম বৃষ্টির আয়োজন। এই উদ্যোগ আম আদমি সরকারও নেওয়ার কথা ভেবেছিল, কিন্তু রূপায়ণ করতে পারেনি। বিজেপি তা করে ফেলল। রাজ্য সরকার তিন কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ করে এই প্রকল্পে। দায়িত্ব দেওয়া হয় কানপুর আইআইটিকে।
গতকাল মঙ্গলবার কানপুর আইআইটি দুই দফায় কয়েকবার সেসনা বিমান নিয়ে উড়ে বেড়ায় দিল্লির আকাশে। মেঘের ভেতর জলকণা সৃষ্টি করতে উড়োজাহাজ থেকে মেঘের মধ্যে ঢালা হয় ড্রাই আইস, সিলভার আয়োডাইড, আয়োডাইজড লবণ ও রক সল্টের রাসায়নিক মিশ্রণ। সেই জলকণা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়বে রাজধানীর আকাশ থেকে।
গতকাল সেই কাজেই নেমেছিল কানপুর আইআইটি। অথচ দিনভর প্রতীক্ষাই সার হলো। দিল্লিতে বৃষ্টির ছিটোফোঁটাও দেখা পাওয়া গেল না। দিল্লির উপকণ্ঠে উত্তর প্রদেশের নয়ডায় বৃষ্টি হয় শান্তিজল ছিটানোর মতো। পরিমাণ ০ দশমিক ১ মিলিলিটার।




Comments