শান্তিতে নোবেলজয়ী ও ইরানের বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী নার্গেস মোহাম্মদীকে ফের গ্রেপ্তার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) পূর্বাঞ্চলীয় শহর মাশহাদ থেকে তাকে আটক করা হয়। চিকিৎসা জনিত কারণে কারাগার থেকে সাময়িক মুক্তিতে থাকার মধ্যেই তাকে পুনরায় আটক করা হলো।
নার্গেস মোহাম্মদীর ফাউন্ডেশন ও বিবিসি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার তিনি সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে মৃত আইনজীবী খোসরো আলিকর্দির স্মরণসভায় যোগ দিতে মাশহাদে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই তাকে এবং তার কয়েকজন সহকর্মীকে আটক করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা যায়, আটকের সময় তারা ‘স্বৈরশাসকের মৃত্যু’ এবং ‘ইরান দীর্ঘজীবী হোক’ সহ নানা সরকারবিরোধী স্লোগান দিচ্ছিলেন।
নার্গেস মোহাম্মদীর স্বামী তাগি রহমানি বিবিসি ফার্সিকে বলেন, ‘তারা নার্গেসকে সহিংসভাবে গ্রেপ্তার করেছে। ওই আইনজীবীর ভাই গ্রেপ্তারের ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেছেন। এটি মানবাধিকার আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।’
এই ঘটনার পরপরই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নোবেল কমিটি। এক বিবৃতিতে তারা নার্গেসের ‘নৃশংস গ্রেপ্তারে’ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। একইসঙ্গে অবিলম্বে মোহাম্মদীর অবস্থান স্পষ্ট করা, তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কোনো শর্ত ছাড়াই তাকে মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে কমিটি।
ইরানে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং মানবাধিকার রক্ষায় আপসহীন লড়াইয়ের স্বীকৃতি হিসেবে নার্গেস মোহাম্মদীকে ২০২৩ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। ২০২১ সাল থেকে তিনি তেহরানের কুখ্যাত এভিন কারাগারে বন্দী ছিলেন। গুরুতর অসুস্থতার কারণে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে চিকিৎসার জন্য তাকে তিন সপ্তাহের সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
সম্প্রতি টাইম ম্যাগাজিনে লেখা এক নিবন্ধে নার্গেস ইরানি কর্তৃপক্ষের দমন-পীড়নের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ইরান সরকার নাগরিকদের ব্যক্তিগত ও জনজীবনের সব দিক নিয়ন্ত্রণ করছে এবং নজরদারি ও নির্যাতনের মাধ্যমে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে।
নার্গেস মোহাম্মদীর ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত তাকে অন্তত ১৩ বার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় তাকে মোট ৩৬ বছরের বেশি কারাদণ্ড এবং ১৫৪টি বেত্রাঘাতের দণ্ড দেওয়া হয়েছে। গত এক বছর ধরে তিনি বাধ্যতামূলক হিজাব পরতেও অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছেন।




Comments