Image description

সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদি সম্প্রদায়ের ওপর বর্বরোচিত হামলায় ১৫ জন নিহতের ঘটনা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই হামলার মূল হোতা বাবা সাজিদ আকরাম ও তার ২৪ বছর বয়সী ছেলে নাভিদ আকরাম। হামলার আগে পরিবারের কাছে তারা একটি নির্দোষ ভ্রমণের গল্প ফেঁদেছিলেন, যার আড়ালে ছিল এক ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের প্রস্তুতি।

নাভিদ ও তার বাবা সাজিদ পরিবারের কাছে দাবি করেছিলেন, তারা জার্ভিস বে-তে মাছ ধরতে যাচ্ছেন। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা গেছে, তারা মাছ ধরতে যাননি। বরং ক্যাম্পসি এলাকায় স্বল্পমেয়াদে ভাড়া দেওয়া একটি ধূসর ইটের বাড়িতে আত্মগোপন করে ছিলেন। সেখানেই তারা হামলার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেন।

নাভিদের মা ভেরেনা জানান, রোববার তিনি ছেলের ফোন পান। তিনি তখনো জানতেন, তার স্বামী ও সন্তান সমুদ্রে স্কুবা ডাইভিং বা সাঁতার কাটছেন। ফোনে নাভিদ মাকে খুব স্বাভাবিক কণ্ঠে বলেন, ‘সে (নাভিদ) বলেছিল, আমরা এখন খেতে যাচ্ছি, তারপর বাড়ি ফিরব, এখন খুব গরম।’ এটিই ছিল মায়ের সঙ্গে তার শেষ কথা।

তদন্তে প্রাপ্ত সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী, রোববার বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটের দিকে ক্যাম্পসির ব্রাইটন অ্যাভিনিউয়ের ১০৩ নম্বর বাসা থেকে প্রথমে বাবা সাজিদ এবং পরে ছেলে নাভিদকে বের হতে দেখা যায়। কালো পোশাক পরিহিত নাভিদ গাড়ির চালকের আসনে বসার আগে পেছনের সিটে সন্দেহজনক কিছু লুকিয়ে রাখেন। গাড়িটি এরপর পূর্ব দিকে প্রায় ৪০ মিনিট ধরে চলে। এর মাত্র ৯০ মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে বন্ডাই বিচে প্রথম গুলির শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

ছেলের এমন নৃশংস কাজে জড়িত থাকার বিষয়টি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না মা ভেরেনা। তিনি বলেন, ‘সে কোনোদিন বন্দুক রাখেনি, বাইরে অকারণে ঘোরাফেরা করত না। এমনকি সে মাদক বা মদ্যপান থেকেও দূরে ছিল। কাজ আর ব্যায়ামই ছিল তার জীবনের সব।’ তিনি আরও জানান, ঘটনার ছবি দেখেও তিনি ছেলেকে চিনতে পারেননি।

জানা গেছে, দুই মাস আগে নাভিদ তার ইটভাটার চাকরি হারান, কারণ প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল। এরপর থেকে তিনি নতুন কাজের সন্ধানে ছিলেন। স্বভাবগতভাবে তিনি খুব একটা সামাজিক ছিলেন না, তার শখ ছিল মূলত মাছ ধরা, স্কুবা ডাইভিং ও শরীরচর্চা।

নাভিদের পরিবার ২০২৪ সালে কেনা বনিরিগের একটি তিন কক্ষের বাড়িতে বসবাস করত। সেখানে নাভিদ তার বাবা-মা, ২২ বছর বয়সী বোন ও ২০ বছর বয়সী ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন। তবে এই আপাত শান্ত ছেলেটিই যে বাবার সঙ্গে মিলে এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটাতে পারে, তা প্রতিবেশী বা পরিবার—কেউই ঘুণাক্ষরেও টের পাননি।

সূত্র: দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড