গত মে মাসে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর পরিচালিত ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর অভিঘাতে পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনার বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির কথা প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানিয়েছেন, ওই অভিযানে দেশটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ‘নূর খান বিমান ঘাঁটি’ গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে ইসহাক দার জানান, মাত্র ৩৬ ঘণ্টার ব্যবধানে নূর খান বিমান ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে মোট ৮০টি বিস্ফোরকবাহী ড্রোন নিক্ষেপ করেছিল ভারত। তিনি দাবি করেন, পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ৭৯টি ড্রোন ধ্বংস করতে সক্ষম হলেও একটি ড্রোন লক্ষ্যভেদ করে। আর সেই একটি ড্রোনের আঘাতেই বিমান ঘাঁটিটির মারাত্মক ক্ষতি হয়। উল্লেখ্য, নূর খান বিমান ঘাঁটিটি রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং এটি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একটি কৌশলগত কেন্দ্র।
সংবাদ সম্মেলনে ইসহাক দার একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি জানান, ১০ মে ভোরে নূর খান ঘাঁটিতে হামলার কয়েক ঘণ্টা পর সকাল ৮টা ১৭ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও তাঁকে টেলিফোন করেন। রুবিও জানান যে, ভারত যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত এবং পাকিস্তানও এতে রাজি কি না। জবাবে দার বলেন, "পাকিস্তানের যুদ্ধে জড়ানোর কোনো ইচ্ছা নেই।" তবে তিনি দাবি করেন, পাকিস্তান ভারতের এই আগ্রাসনের জবাবে ‘অপারেশন বুনিয়ান উম মারসুস’ নামে পাল্টা পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের অনন্তনাগে ২৬ জন পর্যটককে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিচালনা করে ভারত। ওই হামলার দায় স্বীকার করেছিল লস্কর-ই-তৈয়বার শাখা সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)। ভারত এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে কূটনৈতিক ও সামরিক চাপ তৈরি করে।
নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল যে, এই বিশেষ অভিযানে ৭০ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান তখন বিষয়টি অস্বীকার করলেও এখন স্বীকার করছে যে তাদের ৩১ জন নাগরিক নিহত ও ৫৭ জন আহত হয়েছে। তবে তারা নিহতের তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে মানতে নারাজ।
পাকিস্তানের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো মন্ত্রীর মুখে এই ক্ষয়ক্ষতির স্বীকারোক্তিকে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা ইসলামাবাদের কূটনৈতিক ও কৌশলগত অবস্থানের বড় পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন। দীর্ঘদিন ধামাচাপা দিয়ে রাখার পর এই স্বীকারোক্তি দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করল।
মানবকন্ঠ/আরআই




Comments