শীতকাল মানেই ঠাণ্ডা বাতাস, কুয়াশা আর উষ্ণ পোশাকের আরাম। কিন্তু এই ঋতুতে ত্বকের কিছু বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়, কারণ শীতের শুষ্ক আবহাওয়া আমাদের ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা কেড়ে নেয়। ফলে ত্বক হয়ে ওঠে শুষ্ক, রুক্ষ এবং টানটান। এমনকি অনেকের ক্ষেত্রে চুলকানি, ফাটল বা ত্বকের অন্যান্য সমস্যাও দেখা দেয়। কিন্তু কেন এমন হয়? আর কীভাবে এই শুষ্ক ত্বকের মোকাবিলা করা যায়?
এ নিয়েই আজকের আয়োজন।
শীতকালে ত্বক শুষ্ক হওয়ার কারণ
১. কম আর্দ্রতা: শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কমে যায়। শুষ্ক বাতাস ত্বকের উপরিস্তর থেকে প্রাকৃতিক তেল ও আর্দ্রতা শোষণ করে নেয়, ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।
২. ঠাণ্ডা বাতাস: তীব্র ঠাণ্ডা বাতাস সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে এসে আর্দ্রতা উড়ে যেতে সাহায্য করে। বাইরে বের হলে এই প্রভাব আরও বেশি হয়।
৩. গরম পানি ব্যবহার: শীতকালে অনেকেই উষ্ণ বা গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পছন্দ করেন। গরম পানি ত্বকের প্রাকৃতিক তেলের স্তর (সেবাম) নষ্ট করে দেয়, যা ত্বককে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে।
৪. হিটিং সিস্টেমের ব্যবহার: বাসা বা অফিসে ব্যবহৃত হিটিং সিস্টেম (যেমন রুম হিটার) ঘরের ভেতরের বাতাসকে আরও শুষ্ক করে তোলে। এই শুষ্ক বাতাসও ত্বকের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়।
৫. অপর্যাপ্ত পানি পান: শীতকালে আমাদের তৃষ্ণা কম লাগে, ফলে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করি না। শরীরের ভেতরের পানিশূন্যতা ত্বকের শুষ্কতার অন্যতম কারণ।
৬. সুরক্ষাহীনতা: ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় ত্বককে উপযুক্ত পোশাক বা ময়েশ্চারাইজার দিয়ে সুরক্ষা না দিলে তা আরও দ্রুত শুষ্ক হয়ে পড়ে।
৭. কিছু নির্দিষ্ট সাবান ও প্রসাধনী: ক্ষারযুক্ত সাবান বা অ্যালকোহল-ভিত্তিক প্রসাধনী ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা নষ্ট করে দেয়, যা শুষ্কতার কারণ হতে পারে।
শীতকালে শুষ্ক ত্বকের প্রতিরোধে করণীয়
শীতকালে ত্বককে শুষ্কতা থেকে বাঁচাতে কিছু সাধারণ কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
১. সঠিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার:
ঘন ময়েশ্চারাইজার: শীতকালে তেল-ভিত্তিক বা ঘন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, যা ত্বকের আর্দ্রতাকে ধরে রাখতে সাহায্য করে। যেমন – শিয়া বাটার, কোকো বাটার বা সিরামাইডযুক্ত ময়েশ্চারাইজার।
গোসলের পর: গোসলের ২-৩ মিনিটের মধ্যে ভেজা ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগান। এতে আর্দ্রতা ত্বকের ভেতরে ভালোভাবে প্রবেশ করে।
দিনে একাধিকবার: প্রয়োজন অনুযায়ী দিনে ২-৩ বার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, বিশেষ করে হাত ও পায়ের মতো শুষ্ক স্থানে।
২. গরম পানির ব্যবহার সীমিত করুন:
উষ্ণ পানি: গরম পানির পরিবর্তে ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে গোসল করুন।
সংক্ষিপ্ত গোসল: দীর্ঘক্ষণ ধরে গোসল না করে দ্রুত গোসল সেরে ফেলুন।
মৃদু সাবান: ময়েশ্চারাইজিং গুণাগুণ সমৃদ্ধ বা গ্লিসারিনযুক্ত সাবান ব্যবহার করুন।
৩. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন:
শীতকালে তৃষ্ণা কম লাগলেও নিয়মিত বিরতিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। এটি শরীরকে ভেতর থেকে আর্দ্র রাখে।
৪. ঘরের আর্দ্রতা বজায় রাখুন:
হিউমিডিফায়ার ব্যবহার: ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন, যা বাতাসের আর্দ্রতা বাড়িয়ে ত্বককে শুষ্ক হওয়া থেকে রক্ষা করবে।
৫. ত্বককে সুরক্ষা দিন:
পোশাক: বাইরে বের হওয়ার সময় উলের পোশাক, স্কার্ফ, টুপি ও গ্লাভস ব্যবহার করে ত্বককে ঠাণ্ডা বাতাস থেকে রক্ষা করুন।
সানস্ক্রিন: মেঘলা দিনেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, কারণ সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি শীতকালেও ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।
৬. স্ক্রাব কম করুন:
শীতকালে অতিরিক্ত স্ক্রাব করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটি ত্বকের প্রাকৃতিক তেলের স্তরকে আরও দুর্বল করে দিতে পারে। সপ্তাহে একবার বা দুই সপ্তাহে একবার হালকা স্ক্রাব ব্যবহার করতে পারেন।
৭. পুষ্টিকর খাবার:
ভিটামিন এ, সি, ই এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে। বাদাম, বীজ, অ্যাভোকাডো, ফল ও সবুজ শাকসবজি খাদ্যতালিকায় রাখুন।
৮. রাতে বাড়তি যত্ন:
ঘুমানোর আগে হাত ও পায়ে ঘন ময়েশ্চারাইজার বা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে গ্লাভস বা মোজা পরতে পারেন, যা সারারাত ত্বককে নরম রাখতে সাহায্য করবে।
৯. প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ:
যদি শুষ্ক ত্বকের সমস্যা খুব বেশি হয়, চুলকানি বা ফাটল গুরুতর রূপ নেয়, তাহলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শীতকালে সুস্থ ও সুন্দর ত্বক পেতে এই টিপসগুলো মেনে চললে আপনি সহজেই শুষ্কতার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। আপনার ত্বক থাকুক সতেজ, আর্দ্র ও উজ্জ্বল, সারা শীতকাল জুড়ে!




Comments