ইনকিলাব মঞ্চের আহ্ববায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবরের পর বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট ভবনে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) মধ্যরাতের পর একদল লোক ধানমন্ডির সাততলা এ ভবনের বিভিন্ন তলায় গিয়ে প্রতিটি কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে।
বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন তলায় থাকা বাদ্যযন্ত্র ও শিল্প কর্ম। বিভিন্ন কক্ষে থাকা কাগজপত্র ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে আছে।
মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখে ও হেলমেট পরে আসা হামলাকারীরা বিভিন্ন তলায় ভাঙচুর শেষে চলে যাবার সময় ভবনের সামনে আগুন দেয়। তবে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আসার আগেই সেই আগুন নিভে যাওয়ায় বড় অগ্নিকাণ্ড থেকে রক্ষা পায় বাঙালির সাংস্কৃতিক জাগরণের নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনটি।
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন হাদির মৃত্যুর খবর আসার পর শাহবাগসহ রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষোভ বিক্ষোভের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে হামলার খবরের মধ্যে একদল বিক্ষোভকারী রাত ১টার পর জড়ো হতে থাকেন ধানমন্ডির শংকরে ছায়ানটের সামনে।
ঐতিহ্যবাহী এ ভবন ও সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে হামলার বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা দলে দলে সেখানে ঢুকে পড়ে ভাঙচুর চালাতে শুরু করে। তারা সংগঠনের নামফলক ভেঙে ফেলে। নিচ তলায় গিয়ে সব আসবাবপত্র ও বাদ্যযন্ত্র ভেঙে ফেলে।
টেলিভিশনের লাইভ ভিডিওতে তিন তলা পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি কক্ষ ভেঙে চুরমার করার চিত্র দেখা যায়। মিলনায়তনে হামলাকারীর যা পেয়েছেন সেটিই ভাঙচুর করেছেন। পুরো মনিটরিং সিস্টেম, লাইট ও ফ্যান ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেখানে থাকা মাটির তৈরি চারুকর্ম ও শিল্প কর্ম ভেঙে ফেলা হয়েছে।
ভবনটিতে ঢুকে পড়া ব্যক্তিদের ক্ষোভের বলি হয়েছে প্রতিটি তলায় থাকা সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট এবং সেখানে পরিচালিত বিদ্যালয়ের সবগুলো কক্ষ ও অফিস রুম। বেশির ভাগ আসবাব ভেঙে ফেলা হয়েছে। কাগজপত্র ও সরঞ্জাম তছনছ করা হয়েছে।
এ ঘটনার ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে ভাঙচুরের সময় হামলাকারীদের বলতে শোনা যায় ‘ভারতীয় সংস্কৃতি চর্চার’ কোনো জায়গা নেই বাংলাদেশে। বাদ যায়নি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কক্ষও। আলমারির গ্লাস ভেঙে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। চেয়ার-টেবিল সব ওলট পালট করা হয়েছে। ফ্যান ও জানালাও ভাঙচুর করা হয়েছে।
ধানমন্ডি থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা মিথুন সিংহ বলেন, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার কিছু পরেই ছায়ানটে হামলার ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ধারণা বিক্ষোভকারীদের একই অংশ এ দুই হামলা চালিয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ হামলার পর ছায়ানট ভবনে পরিচালিত ‘ছায়ানট সঙ্গীতবিদ্যায়তনের’ ক্লাসসহ সংগঠনের সব কার্যক্রম পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রাত সাড়ে ৩টার দিকে ছায়ানটের ফেইসবুকে পেইজে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
এদিন রাতের হামলার পর সংগঠনটির সদস্য, ছাত্র ও শুভাকাঙ্খীরা সোশাল মিডিয়ায় সরব হয়ে বলেছেন, এ আঘাতেও তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ হবে না।




Comments