গান কেবল শ্রবণের আনন্দ নয়, অনেক সময় তা হয়ে ওঠে প্রতিবাদের ভাষা, প্রতিরোধের আগুন। শীতের শেষ বিকেলে ঠিক এমনই প্রতিবাদী সুরে মুখর হয়ে ওঠে ছায়ানট।
১৮ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেলে ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডে সংহতি সমাবেশের আয়োজন করে দেশের ঐতিহ্যবাহী এই সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। বিকেল চারটায় ‘ও আমার দেশের মাটি’ গান দিয়ে শুরু হয় গানে গানে প্রতিবাদের কর্মসূচি।
ছায়ানট ভবনের সামনের ফুটপাত ধরে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে পড়েন শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও সাধারণ মানুষ। অংশগ্রহণকারীদের সারি ক্রমে দীর্ঘ হয়ে পৌঁছে যায় ২৭ নম্বর মোড় পর্যন্ত। যন্ত্রশিল্পীদের বাদনের সঙ্গে একের পর এক দেশাত্মবোধক ও প্রতিবাদী গান পরিবেশিত হতে থাকে, আর উপস্থিত অনেকেই কণ্ঠ মিলিয়ে দেন শিল্পীদের সঙ্গে।
এই কর্মসূচিতে গাওয়া হয় ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’, ‘চল চল চল’, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’, ‘মানুষ হ মানুষ হ’, ‘আমার প্রতিবাদের ভাষা, আমার প্রতিরোধের আগুন’, ‘হিমালয় থেকে সুন্দরবন হঠাৎ বাংলাদেশ’সহ একাধিক গান। গানের কথায় উঠে আসে দেশপ্রেম, মানবতা, আত্মপরিচয়ের গৌরব ও সম্প্রীতির বার্তা।
ছায়ানটের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার মতো এই প্রতিবাদী কর্মসূচিতেও ছিল শৃঙ্খলা। গানগুলো আগেই অনুশীলন করা হয়েছিল। অনেকেই গানের বাণী ছাপা কাগজে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন, যাতে কণ্ঠ মেলাতে কোনো অসুবিধা না হয়।
এই সংহতি সমাবেশে অংশ নেন ছায়ানটের সভাপতি সারওয়ার আলী, সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসাসহ সংগঠনের শিক্ষক, বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং দেশের বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, আবৃত্তিশিল্পী, চারুশিল্পী, দৃশ্যমাধ্যম শিল্পী, স্থপতি, আলোকচিত্রী, শিক্ষক, লেখক, গবেষক, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী, পরিবেশকর্মী ও সংস্কৃতিসেবীরা।
উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, অধ্যাপক শফি আহমদ, অধ্যাপক এম এম আকাশ, সংগীতশিল্পী খুরশীদ আলম, খায়রুল আনাম শাকিল, বুলবুল ইসলাম, শারমিন সাথী ইসলাম, অদিতি মহসীন, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি, কৃষ্ণকলি ইসলাম, জান্নাত ই ফেরদৌসী, আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, ডালিয়া আহমদ, নৃত্যশিল্পী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়, তামান্না রহমান, ওয়ার্দা রিহাব, চারুশিল্পী নাসিম আহমদ নাদভী, মো. মনিরুজ্জামান, প্রশান্ত কর্মকারসহ আরও অনেকে।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ছায়ানট সভাপতি সারওয়ার আলী বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে ছায়ানট, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও বাউলসমাজের ওপর সহিংস আক্রমণ বাঙালি জাতিসত্তা ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত। এই পরিস্থিতিতে প্রত্যেককে নিজ নিজ ক্ষেত্র থেকে বাঙালি সংস্কৃতি রক্ষায় কর্ম-উদ্যোগ নিতে হবে।’
জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গেয়ে শেষ হয় গানে গানে প্রতিবাদের এই সংহতি সমাবেশ।




Comments