Image description

দেশজুড়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের কাজ। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই সারা দেশের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে ভিড় জমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকরা। গত ১৫ বছরের রাজনৈতিক টানাপোড়েন শেষে এবারের নির্বাচনে বড় দলগুলোর অংশগ্রহণ মাঠপর্যায়ে নেতা-কর্মীদের মাঝে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছে।

এবারের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চমক বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রার্থিতা। অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে তাঁর প্রতিনিধিরা বগুড়া-৭, দিনাজপুর-৩ ও ফেনী-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এবারই প্রথম তাঁর মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষরের বদলে আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হয়েছে।

অন্যদিকে, দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে ঢাকা-১৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। তাঁর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম এই মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এ সময় ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার ও অ্যাডভোকেট আলমগীর হোসেনসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, "জনগণের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়াই আমাদের বড় বিজয়। আমরা উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে নির্বাচনে লড়ছি।"

এদিকে, নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার পর ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াতে ইসলামী। খুলনার চারটি আসনে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ অন্যান্য শীর্ষ নেতারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কুষ্টিয়া-৩ আসনে জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা মুফতি আমির হামজা এবং ঢাকায় মাওলানা মামুনুল হক ও ব্যারিস্টার আরমান বিন কাশেমের মতো প্রার্থীরা লড়ছেন। জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) প্রধান ববি হাজ্জাজ ঢাকা-১৩ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) মোট ৫৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশে নিবন্ধন স্থগিত থাকায় নির্বাচনে নেই আওয়ামী লীগ। রবিবার পর্যন্ত ৩ হাজারের বেশি মনোনয়নপত্র সংগৃহীত হলেও আজ শেষ দিনে অধিকাংশ প্রার্থী তাঁদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।

নির্বাচন কমিশন থেকে শোডাউন ও মিছিলের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রার্থীরা মাত্র পাঁচজন সঙ্গী নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামীকাল ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্রগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে।

নির্বাচনী ক্যালেন্ডার একনজরে:

মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই: ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি, ২০২৬।

আপিল গ্রহণ: ৫ থেকে ৯ জানুয়ারি।

আপিল নিষ্পত্তি: ১০ থেকে ১৮ জানুয়ারি।

প্রার্থিতা প্রত্যাহার: ২০ জানুয়ারি।

প্রতীক বরাদ্দ: ২১ জানুয়ারি।

আনুষ্ঠানিক প্রচারণা: ২২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭:৩০ পর্যন্ত।

ভোটগ্রহণ: ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৬ (বৃহস্পতিবার)।

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাঙ্ক্ষিত প্রতিনিধি নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বলে জানানো হয়েছে। পুরো দেশে মোতায়েন করা হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী।