বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের চন্দ্রিমা উদ্যানে স্বামী ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে সমাহিত করা হয়।
বিকেল ৩টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত দেশের ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম জানাজা শেষে তাঁর মরদেহবাহী কফিন নিয়ে আসা হয় চন্দ্রিমা উদ্যানে। এ সময় হাজারো নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের চোখের জলে শেষ বিদায় জানানো হয় এই মহীয়সী নেত্রীকে।
দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতা ও গুরুতর অসুস্থতায় ভোগার পর মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ৮০ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি আর্থরাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার এবং ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ২৩ নভেম্বর ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর দেড় মাসের মাথায় তিনি না ফেরার দেশে চলে যান।
বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল এক বিষাদময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে স্বামী জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর সংকটে পড়া বিএনপির হাল ধরতে ১৯৮২ সালে সাধারণ গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে পা রাখেন তিনি। ১৯৮৪ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন এবং আমৃত্যু এই দায়িত্ব পালন করেন।
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তাঁর অনমনীয় ও আপসহীন ভূমিকার কারণে তিনি দেশবাসীর কাছে ‘আপসহীন নেত্রী’ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৯১ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে ইতিহাস গড়েন। তিন মেয়াদে দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা এই নেত্রী বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনীতির অন্যতম শীর্ষ কাণ্ডারি হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কারাবরণ করলেও গণতন্ত্রের প্রশ্নে তিনি ছিলেন অটল। আজ স্বামীর পাশে তাঁর চিরনিদ্রার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক দীর্ঘ ও ঘটনাবহুল অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল।
তাঁর মৃত্যুতে দেশজুড়ে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক চলছে এবং আজ বুধবার সারা দেশে সাধারণ ছুটি পালিত হয়েছে। জানাজা ও দাফন অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
মানবকন্ঠ/আরআই




Comments