মানববন্ধন, আন্দোলন, প্রতিবাদ মিছিল প্রায় সমজাতীয় শব্দগুলো আমাদের কাছে খুব পরিচিত। অন্যায়-অবিচার, অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠে প্রতিধ্বনি তুলতেই এসবের আয়োজন করা হয়। কোনো মানুষ, সংগঠন কিংবা রাজনৈতিক দল যখন নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে চায় তখন তারা রাজপথে নামে। আর নেমে কখনও সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে আবার সবশেষ দাবিদাওয়া মেনে না নিলে আন্দোলনের ডাক দেয়।
মূলত যৌক্তিক দাবি অনুযায়ী মানুষ বা রাজনৈতিক দল এগুলো করে থাকে। এ দেশে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছেড়েছেন দীর্ঘদিন ধরে শাসন করা আ.লীগ সরকার। একটানা দেশ পরিচালনা করায় তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারহরণ, নানা ক্ষেত্রে বৈষম্য কিংবা অন্যায়-অত্যাচারের অভিযোগ উঠে। আর শেষমেশ তা কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে এক দফা শেখ হাসিনার পদত্যাগের আন্দোলন হয় এবং আন্দোলন দমাতে না পেরে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়। যে সরকারের উপদেষ্টারা এখন পর্যন্ত দেশ পরিচালনা করছেন। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে দেখা গেছে, এ দেশের অতিউৎসাহী কিছু মানুষ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা কারণে-অকারণে আন্দোলনের ডাক দিচ্ছে। তাদের দাবিদাওয়া যে যৌক্তিক কিংবা তারা তাদের অধিকার হারাচ্ছে এমন কোনো বিষয় না থাকলেও তারা রাজপথে নেমে আন্দোলন সংগ্রাম করছে। কিছুদিন আগে দেখা গেল, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার শিক্ষার্থীরা অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলো দিবে না বলে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করলো। তাদের দাবি বিনা পরীক্ষায় তাদের উত্তীর্ণ করাতে হবে। আবার তার কিছুদিন পর রাজধানীতে আনসার বাহিনীর সদস্যরা তাদের দাবিদাওয়া পূরণের জন্য নেচে-গেয়ে আন্দোলন করলো। এমনকি ঢাকা শহরের রিকশা চালকরাও কিছু দাবিদাওয়া তুলে আন্দোলন করলো। যখন যার ইচ্ছে হচ্ছে সে তার মনগড়া দাবি তুলে রাজপথে নামছে, সড়ক অবরোধ করছে। এতে সাধারণ মানুষের হয়রানি বাড়ছে।
সবশেষ এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল বাতিল ও পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে আন্দোলন করতে করতে সচিবালয়ে ঢুকে পড়ে শিক্ষার্থীরা। তাহলে যে শিক্ষার্থীরা কিছুদিন আগে বিনা পরীক্ষায় পাশের আন্দোলন করলো আজ আবার তাদের একাংশ আসছে ফলাফল বাতিল ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি নিয়ে। ড. ইউনূস সরকার ক্ষমতা গ্রহণের এই কয় মাসেই এমন কয়েকটি বড় বড় আন্দোলন মোকাবিলা করেছে। যেখানে খুব বেশি যৌক্তিক দাবি পাওয়া যায়নি আন্দোলনকারীদের। তাহলে কি দিন দিন আন্দোলন শব্দটি তার সম্মান হারাতে বসেছে? অতিরিক্ত চাওয়া-পাওয়া কিংবা সামান্য কিছু ঘটলেই সবাই জাতীয় প্রেসক্লাব কিংবা সচিবালয়ের সামনে গিয়ে আন্দোলনের ডাক দিয়ে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলবে তা কেমন করে হয়? আসলে আমরা কিছু অতিউৎসাহী মানুষ রয়েছি; যারা কারণে-অকারণে মানুষকে নিয়ে সমালোচনা করি, নিজেদের বেতন-ভাতা বাড়াতে সহকর্মীদের নিয়ে অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করি আর প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, সরকারি সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, ছুটি বাড়ানোর দাবি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করি। এই কাজগুলো আমাদের দেশে আগে খুব বেশি দেখা না গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে বার বার এমন ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এতদিনের সব দাবিদাওয়া যেন এখন একবারে সবাই টেনে তুলছে। এর মধ্যে কেউ বা কোনো গোষ্ঠী ভাবছে, আন্দোলন করলেই কিছু না কিছু হচ্ছে তাহলে আমরাও আন্দোলনে নেমে যায়; যদি কিছু পায়- এমন সব চিন্তা নিয়ে। এজন্য সরকারকে আরো বেশি নজরদারি বাড়ানো দরকার। কারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে এ ধরনের উচ্ছৃঙ্খল কাজ করে দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দিতে চায় তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। আর আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে যাতে মন চাইলেই কোনো ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে। পাশাপাশি আমাদেরও সচেতন হতে হবে।
অর্থনৈতিকভাবে দেশকে সমৃদ্ধ করতে, সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে আমরা যেন সামান্য কোনো বৈষম্যের নাম করে আমার দেশকে, দেশের মানুষকে বিপদে না ফেলি সেদিকেও নিজেদের ভাবনার জায়গাটি তৈরি করতে হবে। আমরা আশা রাখি, সত্যিকার অর্থেই এদেশে একদিন সকল বৈষম্য, অন্যায়-দুর্নীতিকে রুখে দিয়ে আপনার আমার মতো মানুষই সুন্দর এক সোনার বাংলা গড়ে তুলবে আর সেদিন অতি সন্নিকটে।
লেখক: শিক্ষার্থী
মানবকণ্ঠ/এসআরএস
Comments