
নিঃসন্দেহে, বাংলাদেশের রাজনীতি এক অনিশ্চিত অচলাবস্থার মধ্য দিয়েই যাচ্ছে। আর এই অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থা সৃজনে ও লালনে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তি- আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভ‚মিকাই মুখ্য। যারা দীর্ঘকাল ধরে এমন একটি অচলায়তন তৈরি করে রেখেছে। বলাবাহুল্য, কৃত্রিম পরিস্থিতির ঘোলাপানিতে ওই তারাই একচ্ছত্র মাছশিকারি। উল্লিখিত দল দুটি, স্ব-স্ব শাসনামলে উন্নয়ন, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখালেও- শেষ বিচারে তাদের মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নাই।
ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকে অথবা ক্ষমতার বাইরে থেকে-ও রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার এক জাদুকরী ক্ষমতা রয়েছে এ দল দুটির। কিন্তু সে জাদুমন্ত্রে তারা স্বীয় স্বার্থ শতভাগ চরিতার্থ করলেও; গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের আকাক্সক্ষার অনুক‚লে কার্যকর কোনো চেষ্টা নেয়নি। আর দুঃখজনক হলেও সত্য, সেটাই আমাদের বিগত প্রায় পঞ্চাশ বছরের রাজনৈতিক ক্ষমতা ও ক্ষমতা বদলের ইতিহাস। বর্তমানে, বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থান- তৎপরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম নিয়ে জনগণের মধ্যে কৌত‚হল, সন্দেহ ও সংশয় বেড়েই চলছে। মানুষ এখন ভাবছে, কোনো দল সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিলে কী হবে, অথবা কী হবে না অথবা আবার পূর্বের মতো ব্যর্থ হবে কি না, ইত্যাদি।
এ আলোচনায়, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি-এর শাসনামল, জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও মানবাধিকার পরিস্থিতির তুলনামূলক চিত্র-বিচিত্রই নাতিদীর্ঘ কলেবরে তুলে ধরেছি। ৫ আগস্ট-এ ক্ষমতার পট-পরিবর্তন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের ফলে যে স্বস্তি এসেছিল, তা ইতোমধ্যে ফিঁকে হওয়া শুরু করেছে। সেই কাক্সিক্ষত স্বস্তি প্রলম্বিত না হওয়ায় সামনের দিনগুলোতে চ্যালেঞ্জ আরো বাড়বে বলে অনেকেই বলছেন।
অন্তর্বর্তী সরকার-এর কার্যক্রমের গতি-প্রকৃতি যেভাবে চলছে, তাতে জনগণের যে প্রত্যাশা তার অনেক কিছুই অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে সেটা ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেয় না। ইতোমধ্যে বরং অনেকক্ষেত্রে জনআকাক্সক্ষা হোঁচটও খেয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশের ভবিষ্যৎ শাসন ব্যবস্থার গতিপথ নিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মহলও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক কার্যক্রম প্রতিরোধ, এবং জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে যে দীর্ঘ অনাস্থা তার থেকে বের হওয়ার পথ এখনো সুস্পষ্ট না হওয়ায়-ই এই উৎকণ্ঠার কারণ।
রাজনীতি আজকালের খেরো খাতা: একটি দীর্ঘ সংঘাতময় পথ অতিক্রম করে যে নতুন সম্ভাবনার সুযোগ এসেছে, সেখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অন্যতম মুখ্য এ্যাক্টর। তারা বিপুল-বিশাল সমর্থন-ম্যান্ডেট নিয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে এসেছে। এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব তাই- গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন এবং শান্তিপূর্ণভাবে ওই সার্বিক প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা। তবে, চলমান যে পরিস্থিতি; তা থেকে যে এতো সহজ ও সরল পথে মুক্তি মিলবে না সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর পক্ষ থেকে নির্বাচনী ব্যবস্থার অবাধ্যতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে সুস্পষ্ট সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। খুব স্বাভাবিক কারণে সে সন্দেহ প্রকাশ, চলতি রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরো জটিলতার দিকেই নিয়ে যাচ্ছে বৈকি। এমনকি, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে অসহিষ্ণুতার প্রকাশও চরম আশাবাদী মানুষটিকেও সংশয়ী করে তুলছে।
নেতৃত্ব কাঠামো অথবা একনেতৃত্বকেন্দ্রিকতা: আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় দলেরই নেতৃত্বের কাঠামো প্রবলভাবে একনেতৃত্বকেন্দ্রিক। আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা এবং বিএনপিতে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানই শেষ কথা। উভয় দলেই দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চেয়ে ব্যক্তিগত ক্ষমতাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এই একনেতৃত্বকেন্দ্রিকতা দলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করলেও, এটি দলের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্রমশ দুর্বল করে রাখে।
অর্থনৈতিক নীতি-পুঁজিবাদী মডেলের অনুসারী: উভয় দলই পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক মডেল-এর অনুসারী। জাতীয় সম্পদ বেসরকারিকরণ, বেসরকারি খাতের উন্নয়ন, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং বৃহৎ অবকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়নের উপর জোর দেয়। আওয়ামী লীগের শাসনামলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, তৈরি পোশাক শিল্পের বিকাশ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প এর অন্যতম দৃষ্টান্ত। অন্যদিকে, বিএনপির শাসনামলেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল, তবে দুর্নীতি, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যর্থতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তা টেকসই হয়নি। উল্লেখ্য, আওয়ামী শাসনামলের যে সফলতা তারা দাবি করত তার মধ্যে অন্যতম খাত ছিল-অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও ডিজিটালাইজেশন। কিন্তু সেই খাতসমূহে দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে বলে এখন তদন্তে বেরিয়ে আসছে।
শাসন পদ্ধতি-ক্ষমতা কেন্দ্রীভ‚তকরণ: শাসন পদ্ধতির ক্ষেত্রেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রায় একই বৃত্তে ঘুরপাক খেয়েছে। ক্ষমতা কেন্দ্রীভ‚ত রাখার মাধ্যমে উভয় দলই শীর্ষ থেকে চাপিয়ে দেয়া রাজনৈতিক দল ও ক্ষমতাশাসন ব্যবস্থা জারি রেখেছে। এই পদ্ধতি শাসনকে দ্রুততর করলেও, এটি স্থানীয় সরকার ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতাকে সীমিত এবং ক্ষেত্রবিশেষে অস্বীকারও করে। সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো-এতে শাসনব্যবস্থাপনায় জনসম্পৃক্ততা থাকে না বললেই চলে।
মানবাধিকার ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি: মানবাধিকার ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির ক্ষেত্রে উভয় দল সম্পর্কেই সমালোচনা প্রবল। আওয়ামী লীগের শাসনামলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিস্তর ও বহুমুখী অভিযোগ এসেছে। তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করার মাধ্যমে শুধু নিপীড়নই করেনি বরং নতুন নতুন নিপীড়নমূলক পদ্ধতিও সৃজন করেছে (যেমন-আয়নাঘর, গুম, দেশের বাইরে জোরপূর্বক পাঠিয়ে সেই দেশের আইনে গ্রেপ্তার ও বিনা বিচারে কারাপ্রকোষ্ঠে রুদ্ধ করে রাখা)।
অন্যদিকে, বিএনপির শাসনামলেও একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে, বিশেষ করে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের উপর দমন-পীড়নের অভিযোগ রয়েছে। তাদের হাত দিয়েই ‘র্যাব’ গঠিত হয়, ওপারেশন ‘ক্নিনহার্ট’ ইত্যাদি পরিচালনার মাধ্যমে তারাও সেই একই পদ্ধতিতে নির্যাতন সংস্কৃতি জারি রেখেছিল। উভয় দলই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হুমকি মনে করেই নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অন্যান্য রাজনৈতিক দল যে শাসনপ্রক্রিয়ারই অংশ তা তারা বরাবরই অস্বীকার করেছে। এদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কয়েকটি দ্রষ্টব্য আদর্শ ও বৈশিষ্ট্যগত দিক নিয়ে যে পার্থক্য উপরে উল্লিখিত হলো, তাতেÑ দল দুটির মধ্যে পার্থক্য ও মিল মোটাদাগে ধরা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির শাসনামলের তুলনায় অর্থনীতি, উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও সামাজিক সূচকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য দেখা যায়। আওয়ামী লীগের শাসনামলে (২০০৯-২০২৪) দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.৫%-৭.৯% পর্যন্ত পৌঁছেছে, যেখানে বিএনপির (১৯৯১-২০০৬) সময়ে এটি ছিল ৪.৫%-৫.৬%। দারিদ্র্যের হার আওয়ামী লীগের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে ২০.৫% হয়েছে, যেখানে বিএনপির সময় দারিদ্র্য কমার হার তুলনামূলক ধীর ছিল। কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনেও আওয়ামী লীগের শাসনামল এগিয়ে, যেখানে ২০০৯ সালে ৪,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল, তা ২০২৩ সালে ২৫,০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে, বিপরীতে বিএনপির সময় এটি ছিল মাত্র ৩,০০০ মেগাওয়াট। বিদেশি বিনিয়োগ আওয়ামী লীগের সময় দ্বিগুণ হয়েছে, যা অর্থনৈতিক সংযোগ ও বাণিজ্যের প্রসারের ইঙ্গিত দেয়।
বাজেট বরাদ্দেও পার্থক্য স্পষ্ট- আওয়ামী লীগের জাতীয় বাজেট ৫ ট্রিলিয়ন টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে, যেখানে বিএনপির সময় এটি ছিল ২.৫ ট্রিলিয়ন টাকা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়নেও আওয়ামী লীগ তুলনামূলক বেশি ব্যয় করেছে। তবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, গায়েবি মামলা এবং রাজনৈতিক দমন-পীড়নের অভিযোগ থেকে দুই দলকেই নিতে হচ্ছে। যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা কমাতে উল্লেখযোগ্য কোনো কার্যকর উদ্যোগ বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কেউই গ্রহণ করেনি। সামগ্রিকভাবে, আওয়ামী লীগ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে, যেখানে বিএনপির সময় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা বেশি লক্ষণীয় ছিল।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে জুলাই বিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থান একটি তাৎপর্যপূর্ণ বাঁক। সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ এবং সেই ক্ষোভের প্রকাশ ঘটিয়ে শেখ হাসিনার সরকার পতন ঘটে। বিদেশি সহায়তায় (প্রতিবেশী একটি দেশের নিরবচ্ছিন্ন স্বার্থবাদী ভ‚মিকায়) দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা জনগণের প্রতিরোধের মুখে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময়ের স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিস্ট শাসন যখন পাততাড়ি গুটিয়ে পালিয়ে যায়, তখন খুব স্বাভাবিক কারণে সার্বিক পরিস্থিতি বেশ জটিল আকার ধারণ করে। সরকার গ্রহণের পর, অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে রাজনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে। কিছুটা বিলম্বে হলেও, আশা করা হচ্ছে এই সরকার একটি কার্যকর এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে সক্ষম হবে।
তবে, এই প্রক্রিয়াটি সহজ নয়, কারণ বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এবং ধর্মভিত্তিক দলগুলোও ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্যে সমানভাবে সক্রিয় রয়েছে। এসব দল নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডা অনুযায়ী জনগণের কাছে নিজেদের প্রস্তাবনা পৌঁছে দিচ্ছে এবং এসবের মাধ্যমেই আবর্তিত হচ্ছে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের দৈনন্দিন সালতামামি। এতদসত্তে¡ও, অনেক বিশ্লেষকই বলছেনÑ রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং সার্বিক পরিস্থিতি বেশ জটিল।
প্রধান দুই দলের সেকেলে রাজনীতি ও ক্ষমতারোহণের সেটমেন্যু বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি, যারা দীর্ঘ সময় ধরে একে অপরের বিরোধী হয়ে রাজনীতি করে আসছে। তাদের দ্ব›দ্ব কখনও কখনও এমন অবস্থায় পৌঁছায়; যাকে, খুব সহজেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে চলা শীতলযুদ্ধ দ্বৈরথের সাথে তুলনা করলেও অত্যুক্তি হয় না। এদিকে, অন্যান্য ছোট ছোট দলগুলোও নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করতে চেষ্টা করছে।
বিশেষত, জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ঐক্যজোটের মতো ধর্মভিত্তিক দলগুলো রাজনৈতিক অঙ্গনে শক্তিশালী হয়ে উঠছে, যা বিএনপির জন্য আখেরি চ্যালেঞ্জ হয়েই দেখা দিতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। বিএনপি তাদের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ইসলামিক দলগুলোর সাথে সম্পর্কের বিষয়ে দ্বিধায় রয়েছে। রাজনীতি নিয়ে খোঁজ-খবর রাখেন এমন অনেকেই সেটা বলাবলি করছেন। সেই ভাষ্যে যতটুকু আন্দাজ করা যায়, তাতে দেখা যাচ্ছে- বিএনপির একপক্ষ ইসলামিক দলগুলোর থেকে দূরে থাকার নীতিকে সমর্থন দিলেও আরেকটি অংশ মনে করছে- জামায়াতের সমর্থন ছাড়া তারা নির্বাচনে সফল হতে পারবে না, এমনটিই। বিএনপির এই দ্বিধা-কে চলমান রাজনীতির এক ধরনের ‘ক্ল্যাসিক ডিলেমা’ হিসেবে দেখা যেতে পারে।
কিন্তু বিএনপি রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে যতোই জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে আলাদা রাখতে চাইছে, তা শেষ পর্যন্ত কতটুকু তারা রাখতে পারবে সেটা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কারণ, বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর রাজনৈতিক শক্তি ও জনসমর্থন পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলনে তারা বিশেষভাবে সক্রিয় ছিল, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পশ্চাতেও তাদের সক্রিয় ভ‚মিকা ছিল বলে উভয়পক্ষই স্বীকার করেছে। শেখ হাসিনার পতন-প্রত্যাশী অনেকেই সে সক্রিয়তাকে ইতিবাচকভাবেই মূল্যায়ন করছে। এছাড়া, জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে আজ পর্যন্ত সারাদেশে বিপুল-বিশাল সক্রিয় ও সমন্বিত কর্মসূচি দিয়ে তারা সক্রিয় রয়েছে; যা অনিবার্যভাবে তাদের সমর্থন বেইজ-কে সম্প্রসারিত করে চলছে।
জনগণের আস্থা অর্জন সম্ভব হবে কি: বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হবে কি না, তা অনেকগুলো প্রশ্নের সদুত্তরের ওপর নির্ভর করছে। বিগত দিনে তাদের রাজনীতি, রাজনৈতিক দল ও সরকার পরিচালনার ইতিহাস, ১৯৯৬ সালের একদলীয় নির্বাচনের একগুঁয়েমির অভিযোগ এবং ২০০৬ সালে ক্ষমতার পরম্পরা রক্ষার অপকৌশল হিসেবে প্রধান বিচারপতির বয়সবৃদ্ধি নিয়ে বিতর্ক ইত্যাদি অভিযোগ তো মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি। তবে সময় যেমন পাল্টায়, মানুষও পাল্টায়। তেমনি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিও তো পাল্টাতে পারে। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের মূলসুরকে বিবেচনায় নিয়ে বিএনপি তার চিরচেনা সেই রাজনৈতিক রূপ ও দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে খোলনলচে বদলাতে পারবে কী না এবং সেই পরিবর্তন বাস্তবায়নে তারা কতোটা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকবে তার ওপরই নির্ভর করছে তাদের ফিরে আসা।
লেখক: অধিকারভিত্তিক উন্নয়নসন্ধানী
Comments