৪টি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার অনুমতি পেল বিএনপি, অপেক্ষায় আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চারটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার অনুমতি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে দুটি বুলেটপ্রুফ প্রাইভেট কার এবং দুটি বুলেটপ্রুফ মিনিবাস রয়েছে। এ ছাড়াও, দলটি একটি শটগান ও দুটি পিস্তলের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে, যা বর্তমানে বিবেচনাধীন।
বিএনপির নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বলেন, “নির্বাচনের সময় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সারা দেশে প্রচারে যাবেন এবং জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করবেন। তাঁদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” তিনি জানান, নিরাপত্তার পাশাপাশি জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জাপান থেকে আসছে কাস্টম ডিজাইনের বুলেটপ্রুফ গাড়ি
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার নির্বাচনী সফরের জন্য বিশেষভাবে তৈরি একটি বুলেটপ্রুফ মিনিবাস জাপান থেকে আমদানি করা হচ্ছে। এই যানবাহনটি তাঁর স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় কাস্টম ডিজাইনে তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়াও, তারেক রহমানের জন্য আরেকটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি জাপান থেকে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। দলটি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নথি সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দিয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি মাসের শুরুতে একটি বুলেটপ্রুফ বাস এবং গত জুন মাসে একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে, কোন দেশ থেকে কোন মডেলের গাড়ি কেনা হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দলীয় সূত্রের মতে, জাপান থেকে গাড়ি আমদানির বিষয়ে আলোচনা চলছে।
আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের আবেদন বিবেচনাধীন
বুলেটপ্রুফ গাড়ির পাশাপাশি বিএনপি একটি শটগান ও দুটি পিস্তলের লাইসেন্সের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই আবেদনটি এখনো বিবেচনাধীন রয়েছে।
বুলেটপ্রুফ গাড়ি আমদানির অনুমতি বিরল
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বুলেটপ্রুফ গাড়ি আমদানির জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। এ ধরনের অনুমতি সাধারণত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান, বিদেশি দূতাবাস এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের জন্য দেওয়া হয়। রাজনৈতিক দলের জন্য এ ধরনের অনুমতি অতীতে খুব কমই দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা) সূত্রে জানা যায়, জাপান, কানাডা ও জার্মানি থেকে সাধারণত বুলেটপ্রুফ গাড়ি আমদানি করা হয়। অতীতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য নব্বইয়ের দশকে এবং ২০০৯ সালে বুলেটপ্রুফ গাড়ি আমদানি করা হয়েছিল।
বারভিডার সভাপতি আবদুল হক জানান, একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ির দাম প্রায় ২ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা)। তবে, ৮০০ শতাংশ শুল্কসহ আমদানি করলে খরচ পড়তে পারে ২২ কোটি টাকা।
নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) জানিয়েছে, নির্বাচনী প্রচারের সময় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মদদে বা তাদের নিয়োগ করা দেশি-বিদেশি এজেন্টের মাধ্যমে আক্রান্ত হতে পারেন। এই ঝুঁকি বিবেচনায় বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত গত জুনে খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি এবং পরে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের জন্য একটি বুলেটপ্রুফ বাস কেনার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিলেন।
নির্বাচনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিএনপির এই উদ্যোগ তাদের নেতৃত্বের নিরাপত্তা ও জনগণের সঙ্গে সংযোগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে।
Comments