Image description

সম্প্রতি ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগেও দুই দফায় টিকিটের জন্য আবেদনের সুযোগ পেয়েছিলেন সমর্থকরা, তবে তখন ভেন্যু বা ম্যাচ চূড়ান্ত ছিল না। ড্রয়ের পর এবারই প্রথম নির্দিষ্ট ম্যাচ ও ভেন্যু দেখে টিকিট কেনার সুযোগ মিলছে।

ফিফা টিকিটের তৃতীয় ধাপের মূল্যতালিকা প্রকাশ করার পর বিশ্বজুড়ে সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তবে চড়া দামের প্রভাব পড়েনি টিকিটের চাহিদায়। ফিফা জানিয়েছে, তৃতীয় ধাপের কার্যক্রম শুরুর প্রথম ২৪ ঘণ্টাতেই প্রায় ৫০ লাখ সমর্থক টিকিটের জন্য আবেদন করেছেন। অবাক করা বিষয় হলো, গ্রুপপর্বে ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার চেয়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালের ম্যাচের জন্য সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে।

এমন সাড়াকে ‘বিশ্বকাপের প্রতি বিশ্বজুড়ে অভূতপূর্ব আগ্রহ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে ফিফা। সংস্থাটি ইঙ্গিত দিয়েছে, টিকিটের চড়া দাম নিয়ে সমালোচনা থাকলেও আপাতত মূল্য কমানোর কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।

জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, এবারের বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বের টিকিটের দাম ১৮০ ডলার (প্রায় ২২ হাজার টাকা) থেকে শুরু করে ৭০০ ডলার (প্রায় ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা) পর্যন্ত। আর ফাইনাল ম্যাচের সর্বনিম্ন টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৮৫ ডলার (প্রায় ৫ লাখ ১১ হাজার টাকা), যা সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৬৮০ ডলার (১০ লাখ ৬১ হাজার টাকা) পর্যন্ত হতে পারে।

ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ) ও দেশটির সাপোর্টার্স ট্রাভেল ক্লাবের (ইএসটিসি) প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, কোনো সমর্থক যদি গ্রুপ পর্ব থেকে ফাইনাল পর্যন্ত দলের প্রতিটি ম্যাচ দেখতে চান, তবে তার খরচ হবে ৭ হাজার ডলারের বেশি (প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা)।
টিকিটের এই চড়া মূল্যকে ‘চরম মাত্রায় শোষণমূলক’ বলে অভিহিত করেছে সমর্থকদের সংগঠন ‘ফুটবল সাপোর্টার্স ইউরোপ’ (এফএসই)। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ‘এটি বিশ্বকাপের ঐতিহ্যের সঙ্গে ভয়াবহ বিশ্বাসঘাতকতা। যারা এই আয়োজনকে প্রাণবন্ত করে তোলেন, সেই সমর্থকদের অবদান এখানে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে।’ সংগঠনটি দাবি জানিয়েছে, টুর্নামেন্টের ঐতিহ্য ও সর্বজনীনতা রক্ষায় গ্রহণযোগ্য সমাধান না আসা পর্যন্ত জাতীয় অ্যাসোসিয়েশনগুলোর মাধ্যমে টিকিট বিক্রি যেন বন্ধ রাখা হয়।

ক্রীড়া বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইএসপিএন জানিয়েছে, সাত বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র যখন বিশ্বকাপ আয়োজনের বিড দিয়েছিল, তখন আয়োজকদের লক্ষ্য ছিল গ্রুপ পর্বের টিকিটের দাম ২১ ডলারের মধ্যে রাখা। অথচ ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে টিকিটের দাম ছিল ২৫ থেকে ৪৭৫ ডলার। এমনকি গত কাতার বিশ্বকাপেও টিকিটের দাম ছিল ৭০ থেকে ১ হাজার ৬০০ ডলারের মধ্যে।

এবারই প্রথম বিশ্বকাপে ‘ডায়নামিক প্রাইসিং’ পদ্ধতি চালু করেছে ফিফা। এর ফলে চাহিদার ওপর ভিত্তি করে টিকিটের দাম ওঠানামা করবে। এর আগে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপেও এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল।

গত বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া তৃতীয় ধাপের টিকিট বিক্রি প্রক্রিয়ার নাম দেওয়া হয়েছে ‘র‍্যান্ডম সিলেকশন ড্র’। এই ধাপে সমর্থকরা পছন্দমতো ম্যাচ ও ক্যাটাগরি নির্বাচন করতে পারলেও আবেদন করলেই টিকিট পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। এই প্রক্রিয়া চলবে আগামী ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত। সফল আবেদনকারীদের ইমেইলের মাধ্যমে জানানো হবে এবং টিকিটের অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হবে।

ফিফা জানিয়েছে, আগের দুই ধাপের মতো এবারও টিকিটের চাহিদায় শীর্ষে আছে আয়োজক তিন দেশ—যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো। আয়োজক দেশের বাইরে শীর্ষ ১০ আবেদনকারী দেশের তালিকায় রয়েছে কলম্বিয়া, ইংল্যান্ড, ইকুয়েডর, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, স্কটল্যান্ড, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও পানামা।

ম্যাচগুলোর মধ্যে প্রথম ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে ২৭ জুন মায়ামিতে অনুষ্ঠেয় পর্তুগাল বনাম কলম্বিয়া ম্যাচের জন্য। এছাড়াও ব্রাজিল-মরক্কো (নিউ জার্সি), মেক্সিকো-দক্ষিণ কোরিয়া (গুয়াদালাহারা), ইকুয়েডর-জার্মানি (নিউ জার্সি) ও স্কটল্যান্ড-ব্রাজিল (মায়ামি) ম্যাচ নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে।