Image description

গ্যাসের অভাবে প্রায় ১০ মাস ধরে বন্ধ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সার কারখানা। প্রতিদিন ব্যাহত হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার ইউরিয়া উৎপাদন। ফলে দেশের সার উৎপাদনে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। নষ্ট হচ্ছে দামি যন্ত্রপাতিও। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সার উৎপাদন করতে না পারায় দেশের পুরনো এ সার কারখানাটি এখন লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। 

তবে অভিযোগ রয়েছে, বিদেশ থেকে সার আমদানির মাধ্যমে কমিশন বাণিজ্যের জন্য প্রায়ই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয় দেশিয় সার কারখানাগুলোতে।

আশুগঞ্জ সার কারখানায় ১৯৮৩ সালের জুলাইয়ে শুরু হয় বাণিজ্যিকভাবে ইউরিয়া সার উৎপাদন। এখানকার উৎপাদিত প্রিলড ইউরিয়া সার সাড়ে সাতশো ডিলারের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয় আশপাশের অন্তত সাত জেলায়। চালুর প্রথম দিকে ১ হাজার ৬০০ টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করতে পারলেও ধীরে ধীরে কমেছে সক্ষমতা।

দীর্ঘ সময় ধরে উৎপাদনে থাকা সার কারখানাটির অধিকাংশ যন্ত্রপাতির কার্যক্ষমতা কমেছে। এ অবস্থাতেও বর্তমানে প্রতিদিন দিনে প্রায় সাড়ে ১ হাজার ১০০ ইউরিয়া উৎপাদন করতে পারে কারখানাটি। গত কয়েক বছর ধরে গ্যাস সংকটের কারণ দেখিয়ে বছরের অধিকাংশ সময় বন্ধ রাখা হয় গ্যাস সরবরাহ। এতে করে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। ফলে চাহিদা পূরণে আমদানি করতে হচ্ছে বিদেশি সার।

উৎপাদন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধান কাঁচামাল গ্যাস না পেয়ে বছরের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে সার উৎপাদন। ফলে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে কারখানাটি। এছাড়া দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় নষ্ট হচ্ছে দামি যন্ত্রপাতি।

কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা জানান, কারখানায় কোনো প্রডাকশন নেই। এক কেজি সার বিক্রি করারও উপায় নেই সেখান থেকে। দিন দিন তাদের লোকসানের বোঝা বেড়ে যাচ্ছে। তারা সারের কাঁচামাল পাচ্ছে না ফলে কারখানায় উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না।

উৎপাদন চালু রাখতে আশুগঞ্জ সার কারখানায় প্রতিদিন প্রায় ৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন। ইতোপূর্বে দেশের বাকি সার কারখানাগুলোতে গ্যাস দেয়া হলেও সংকটের কারণ দেখিয়ে আশুগঞ্জ সার কারখানা বন্ধ রাখাকে ষড়যন্ত্র মনে করছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা।

আশুগঞ্জ সার কারখানা এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক মো. আবু কাউসার বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এ কারখানাটি গ্যাস পাচ্ছে না। যেখানে গ্যাসের সহজলভ্যতা থাকলেও আমাদের কারখানায় গ্যাস দেয়া হচ্ছে না। ফলে দিন দিন লোকসানে পড়ে যাচ্ছে কারখানাটি। টোটাল ছয়টি কারখানা আছে এরমধ্যে পাঁচাটি কারখানায় সরবারহ আছে গ্যাস শুধু এ কারখানাতেই সরবারহ বন্ধ রেখেছে।’

গ্যাসের জন্য বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন থেকে পেট্রোবাংলার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানান সার কারখানার এ কর্মকর্তা।

আশুগঞ্জ সার কারখানা উপ-মহাব্যবস্থাপক তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, আমাদের চেয়ারম্যান নিয়মিত পেট্রোবাংলার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন শুধু।

তবে পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষের দাবি, বিসিআইসির জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাস বরাদ্দ দেয়া আছে, কোন কারখানা গ্যাস পাবে- তা বিসিআইসিই নির্ধারণ করে।

পেট্রোবাংলা পরিচালক প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটি বিসিআইসির ব্যাপার আমাদের বরাদ্দ দেয়া আছে। ওই বরাদ্দের মধ্যে কারখানাগুলো চালানো হবে।’

আশুগঞ্জের মেঘনাপাড়ে প্রায় একশো একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত আশুগঞ্জ সার কারখানা। গ্যাস না পাওয়ায় গত ১ মার্চ উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ।