Image description

এশিয়া কাপের সুপার ফোরের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত বোলিং প্রদর্শন করে বাংলাদেশ। টস জিতে ভারতকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে তাদের ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৬৮ রানে আটকে রাখে টাইগাররা। এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও একই রানে আটকে তাড়া করে জিতেছিল বাংলাদেশ। এই ম্যাচে বিশেষ কৃতিত্ব পান লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন, যিনি বল হাতে দুটি উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে অভিষেক শর্মার রানআউটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

অভিষেকের তাণ্ডব থামিয়ে রিশাদের প্রভাব

ম্যাচের শুরু থেকেই ভারতের ওপেনার অভিষেক শর্মা ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের বোলারদের ওপর চড়াও হন। ৩৭ বলে ৬ চার ও ৫ ছক্কায় ৭৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন তিনি। তৃতীয় ওভারে তানজিম হাসান সাকিবের বলে ৭ রানে থাকা অভিষেকের ক্যাচ ফেলে দেন উইকেটরক্ষক জাকের আলী। এই সুযোগে অভিষেক দ্রুত রান তুলে ২৫ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন। তবে ১১.১ ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানের বলে রিশাদ হোসেনের দুর্দান্ত থ্রোতে রানআউট হন তিনি। এই রানআউট ভারতের রানের গতি কমিয়ে দেয়। অভিষেকের আউটের পর ভারত শেষ ৪৭ বলে মাত্র ৫৬ রান তুলতে সমর্থ হয়, যেখানে হার্দিক পান্ডিয়ার ২৯ বলে ৩৮ রান (৪ চার, ১ ছক্কা) ছিল উল্লেখযোগ্য।

রিশাদের বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে ভারতের ছন্দপতন

২৩ বছর বয়সী লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন ভারতের ইনিংসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ৭.১ ওভারে শুবমান গিলের (২৯ রান, ১৯ বল, ২ চার, ১ ছক্কা) উইকেট তুলে ভারতের ৭৭ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন। এরপর ৮.১ ওভারে শিবম দুবেকে (২ রান) আউট করে ভারতকে চাপে ফেলেন। রিশাদের দুটি উইকেট ছাড়াও তানজিম হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন একটি করে উইকেট নেন। সাইফ হাসান উইকেট না পেলেও ২ ওভারে মাত্র ৭ রান দিয়ে অসাধারণ বোলিং করেন।

তানজিমের আঘাত ও সাইফউদ্দিনের শেষ ওভার

১৪.৩ ওভারে তানজিম হাসান তিলক বর্মাকে (৫ রান) আউট করে ভারতের পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটান। তিনি ডিপ মিডউইকেটে সাইফ হাসানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। এর আগে ১২তম ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানের ওভারে অভিষেকের রানআউটের পাশাপাশি সূর্যকুমার যাদব (৫ রান) গ্লাভসবন্দি হন। রিভিউ নিয়ে জাকের আলীর সাফল্যে ভারত ১১৪ রানে চতুর্থ উইকেট হারায়। শেষ ওভারে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন দুর্দান্ত বোলিং করে মাত্র ৪ রান দেন এবং হার্দিক পান্ডিয়াকে তানজিদ হাসানের হাতে ক্যাচ আউট করান।

পাওয়ার প্লেতে ভারতের ঝড়

ম্যাচের শুরুতে ভারতের দুই ওপেনার অভিষেক শর্মা ও শুবমান গিল পাওয়ার প্লেতে ৬ ওভারে বিনা উইকেটে ৭২ রান তুলে দলকে দারুণ শুরু এনে দেন। অভিষেক ১৯ বলে ৪৬ রান ও গিল ১৭ বলে ২৫ রান করেন। তবে রিশাদের বোলিংয়ে গিল আউট হওয়ার পর ভারতের রানের গতি কিছুটা কমে। প্রথম ১০ ওভারে ৯৬ রান তুললেও পরের ১০ ওভারে ভারত মাত্র ৭২ রান যোগ করতে পারে।

বাংলাদেশের একাদশে পরিবর্তন

বাংলাদেশ এই ম্যাচে চারটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে। তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, শেখ মেহেদী ও লিটন দাস বাদ পড়েন। লিটনের জায়গায় অধিনায়কত্ব করছেন জাকের আলী। পারভেজ হোসেন, তানজিম হাসান, রিশাদ হোসেন ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন দলে ফিরেছেন। ভারত অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে খেলছে।

বাংলাদেশ একাদশ: সাইফ হাসান, তানজিদ হাসান, পারভেজ হোসেন, তাওহীদ হৃদয়, জাকের আলী (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), শামীম হোসেন, রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদ, তানজিম হাসান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান।
ভারত একাদশ: অভিষেক শর্মা, শুবমান গিল, তিলক বর্মা, সূর্যকুমার যাদব (অধিনায়ক), সাঞ্জু স্যামসন (উইকেটরক্ষক), শিবম দুবে, হার্দিক পান্ডিয়া, অক্ষর প্যাটেল, কুলদীপ যাদব, জসপ্রীত বুমরা, বরুণ চক্রবর্তী।

এখন ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সুপার ফোরে ১৬৮ রান তাড়া করে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এবার ভারতের বিপক্ষে একই লক্ষ্য তাড়া করতে হবে টাইগারদের। জাকের আলীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত ২০ ওভারে ১৬৮/৬ (অক্ষর ১০*, গিল ২৯, দুবে ২, অভিষেক ৭৫, সূর্য ৫, তিলক ৫, হার্দিক ৩৮)। বোলিং: রিশাদ হোসেন ২ উইকেট, তানজিম হাসান ১, মোস্তাফিজুর রহমান ১, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ১।