আঠারো লাখ সরকারি চাকরিজীবীর অধিকার হরণ করা অধ্যাদেশ জারি করায় সিভিল প্রশাসনে প্রশ্ন উঠেছে সরকারের প্রায়োরিটির জায়গা আসলে কোনটি- এই রকম অধ্যাদেশ জারি করে কী নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার- এসব প্রশ্ন তুলছেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ জারির পর এসব প্রশ্ন জনমনে আরও প্রবল আকার ধারণ করছে বলে জানিয়েছেন এই অধ্যাদেশ বাতিলের আন্দোলনে থাকা সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে রোববার (২৫ মে) রাতে সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করা হয়। এই অধ্যাদেশ মৌলিক অধিকার পরিপন্থি উল্লেখ করে সোমবার (২৬ মে) সচিবালয় আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠে।
গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদে অধ্যাদেশটি অনুমোদনের পর থেকেই গত কয়েকদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সোমবার (২৬ মে) সচিবালয়ে আন্দোলন আরও জোরদার হয়। এতদিন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ (নুরুল-মুজাহিদ গ্রুপ), বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ (বাদীউল-নিজাম গ্রুপ) এবং আন্তঃমন্ত্রণালয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন আন্দোলন করে আসছিল। অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে আন্দোলনরত প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠনসমূহের সমন্বয়ে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম গঠন করা হয়।
নবগঠিত সংগঠনের কো-চেয়ারম্যান মো. নূরুল ইসলাম অবিলম্বে এই কালো অধ্যাদেশ বাতিল করার জন্য বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যথায় সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ বাতিলের লক্ষ্যে সর্বাত্মক কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
অপর কো-চেয়ারম্যান মো. বাদীউল কবির বলেন, অবিলম্বে এই কালো অধ্যাদেশ বাতিলের লক্ষ্যে বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ এগিয়ে না এলে এ আন্দোলন সারাদেশে ১৮ লাখ কর্মচারীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে। ইতোমধ্যে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে আন্দোলন চলছে। তাই কালক্ষেপণ না করে সরকারের বোধোদয় কামনা করেন।
তিনি আরও বলেন, সরকারি কর্মচারীদের অহেতুক কতিপয় কর্মকর্তা বর্তমান সরকারের প্রতি লেলিয়ে দিয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান প্রত্যাশা করেন।
সচিবালয়ের কর্মচারীরা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, এ ধরনের কালা কানুনের কারণে কতিপয় স্বার্থবাদী কর্মকর্তাদের কাছে কর্মচারীরা ব্যক্তিগত দাসত্বে পরিণত হবে। ক্ষমতার অপব্যবহার বেশি হবে। বিভিন্ন কারণে অপছন্দের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মক্ষেত্রে নাজেহাল হবে। চাকরি হারানোর সুযোগ তৈরি হবে। নারী সহকর্মীদের সম্ভ্রমহানির সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে সারাদেশের নারী সহকর্মীরা দারুণভাবে ক্ষুব্ধ রয়েছে।
২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইন থেকে আসা নতুন অধ্যাদেশের প্রেক্ষাপট নিয়ে প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলো এটা জারি হবে না, বিবেচনা করা হবে। এটা আবার রাতের আঁধারে জারি করার দরকারটা কী? ফ্যাসিবাদী শাসনামলে যা যা ঘটতো সে রকমই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে কিনা সেটা জনমনে প্রশ্ন এসেছে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, এখন সরকারের প্রায়োরিটি কী? এই রকম অধ্যাদেশ করা, এনবিআর ভাঙা, করিডোর দেওয়া, বন্দর বেসরকারি খাতে দেওয়া, এগুলো কেন করতেছে? এগুলো নিয়ে তো জনগণের প্রশ্ন আছে যে এসব করে কী নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিনা? এগুলোর সঙ্গে অনেক কিছু কানেক্ট করবে। কোনটা প্রায়োরিটি, কোনটা প্রায়োরিটি না- এগুলো দেখতে হবে।
সরকারি কর্মচারীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা দাবি নিয়ে আন্দোলন করে আসছে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম। ফোরামের সদস্য সচিব কাজী মেরাজ হোসেন বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুখ বন্ধ রাখার জন্য, তাদের হুমকি-ধামকিতে রাখার জন্য, ভয়-ভীতি দেখানোর জন্য এ ধরনের একটা অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। যাতে প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনো প্রকার প্রতিবাদ করতে না পারে, সুকর্ম-কুকর্ম যাই হোক- এসব বিষয়ে যাতে কোনো প্রকার কথা বলতে না পারে।
১৮-১৯ লাখ সরকারি চাকরিজীবী সবাই এই অধ্যাদেশের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।




Comments