
মূল বেতনের ২০ শতাংশ (ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা) বাড়িভাড়াসহ তিন দফা দাবিতে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা স্থগিত করে আমরণ অনশণের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। এর সঙ্গে সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সকল কার্যক্রমে লাগাতার সর্বাত্মক কর্মবিরতির কথা জানিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী এ ঘোষণা দেন। এর আগে তারা সচিবালয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরারের সঙ্গে সভা করেন। তবে সভায় ফলপ্রসূ সমাধান আসেনি। দিনভর শিক্ষকরা শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
গত ৫ অক্টোবর শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বাড়িয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ্যে এলে প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষকরা তিনদফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন। গত সোমবার শিক্ষকদের আন্দোলনে প্রেস ক্লাবে পুলিশ লাঠিপেটা করলে আন্দোলন বড় হয়, সেখান থেকে শিক্ষকরা শহীদ মিনারে আন্দোলন করে আসছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি চলছে।
গত বুধবার তারা শাহবাগ মোড় আড়াই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ও রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা অভিমুখে ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচি ছিল তাদের, তবে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে গিয়ে তারা এটি স্থগিতের ঘোষণা দেন।
দেলোয়ার হোসেন আজিজী বলেন, রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে অনুরোধ এসেছে, যমুনার দিকে পদযাত্রা কর্মসূচি করলে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হতে পারে। এখানে সুযোগসন্ধানী-ষড়যন্ত্রকারীরা ঢুকে আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যেতে পারে। আপনারা কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করেন, আমরা সরকারকে চাপ সৃষ্টি করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। তাদের অনুরোধে আজকের জন্য যমুনা অভিমুখে কর্মসূচি আমরা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
শিক্ষকদের তিন দফা দাবি হলো- মূল বেতনের ২০ শতাংশ (ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা) বাড়িভাড়া, ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং কর্মচারীদের জন্য ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতা প্রদান করা।
নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, আমাদের নতুন কর্মসূচি- ২৪ ঘণ্টা লাগাতার অবস্থান অব্যাহত থাকার পাশাপাশি আগামীকাল দুপুর দুইটা থেকে আমরা অনশন শুরু করব ইনশাআল্লাহ। এরপরেও যদি সরকারের বোধহয় না হয় আমরা আমরণ অনশনে যাব। এরপরেও যদি আমাদের প্রতি সরকারের কোনো দয়া না হয়, আমরণ অনশন করতে করতে আমরা শিক্ষকরা এখানেই মৃত্যুবরণ করব।
তিনি বলেন, আমাদের দেহ এখান থেকে জীবিত যাবে না, আমাদের লাশ এখান থেকে যাবে। কিন্তু অধিকারের প্রশ্নে কোনো আপোস আমরা করব না। ক্লাস তো এমনিতেই বন্ধ, কিন্তু রোববার থেকে লাগাতার কর্মবিরতি। পরীক্ষাসহ সবকিছু রোববার থেকে বন্ধ থাকবে।
এ দিকে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর সচিবালয়ে দেলোয়ার হোসেন আজিজী বলেন, আলোচনার নামে আইওয়াশ করা হয়েছে। আমরা উপদেষ্টাকে বাবা সম্বোধন করেছি- আপনি আমাদের বাবার মতো। আমাদের প্রত্যাশা- আমাদের ডাল ভাতের ব্যবস্থা করে দেন। আমরা কান্না করেছি কিন্তু উনি বক্তব্যে অনড়।
তাদের নতুন প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, আমরা বলেছি আমাদেরকে এই বছরে ১০ শতাংশ, আর আগামী বাজেটে ১০ শতাংশ দেন। এটা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করে দেবেন। উনারা আমাদের কথা পুনর্বিবেচনা করেন নাই। হাজার কোটি টাকার অস্ত্র কিনতে পারে, প্রকল্পের নামে প্রশিক্ষণের নামে টাকা তসরুপ হচ্ছে কিন্তু আমাদের শিক্ষকদেরকে সরকার তিন হাজার টাকা না দিতে পারে, এই রাষ্ট্র দেউলিয়া হয়ে যাক, আমাদের কোনো আপত্তি নাই। আমরা কোনো অবস্থাতেই আমাদের শ্রেণি কার্যক্রমে ফিরব না।
তিনি আরও বলেন, যেই রাষ্ট্র ছয় লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারীদের ডাল ভাতের ব্যবস্থা করতে পারে না। রাষ্ট্রের উচিত শিক্ষাব্যবস্থাকে বন্ধ করে দিয়ে সবাইকে ছুটি দিয়ে দেওয়া। আমরা সিএনজি-রিকশা চালিয়ে, দিনমজুরি-কৃষিকাজ করে আমাদের বাচ্চাদেরকে নিয়ে জীবনযাপন করব। প্রয়োজনে আমরা না খেয়ে মরে যাব; আমরা আমাদের দাবি থেকে চুল পরিমাণ বিচ্যুত হব না।
Comments