Image description

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সে গতকাল শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেসরকারি বিমান, পরিবহন ও পর্যটন এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। রোববার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই কাজ শুরু হয়েছিল, এবং ফায়ার সার্ভিসকে আটকে রাখার অভিযোগ সঠিক নয়।

উপদেষ্টা বলেন, “বিমানবন্দরের ভেতরে অগ্নিনির্বাপণে যারা ছিলেন, তারা ঘটনার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই কাজ শুরু করেছেন। এটি একটি কেপিআইভুক্ত এলাকা, যেখানে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রয়েছে।” তিনি আরও জানান, আগুনে আমদানি করা পণ্য ধ্বংস হয়েছে, এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অর্থমূল্য ও ওজনের ভিত্তিতে নির্ধারণের কাজ চলছে। খাতভিত্তিক ক্ষতির হিসাবও করা হচ্ছে।

অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত প্রচেষ্টা

গতকালের অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং বিজিবি সমন্বিতভাবে কাজ করেছে। প্রায় সাত ঘণ্টা পর রাত ৯টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে, এবং বিমানবন্দর পুনরায় চালু হয়। তবে, এই ঘটনায় আনসার বাহিনীর ২৫ সদস্যসহ মোট ৩৫ জন আহত হয়েছেন।

যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে সরকারি পদক্ষেপ

উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানান, যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। আগামী তিন দিনের জন্য নন-সিডিউল অতিরিক্ত ফ্লাইটের সব ধরনের খরচ মওকুফ করা হয়েছে। এছাড়া, আগুনের কারণে ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় বিমানবন্দরে অবস্থানরত যাত্রীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনো ব্যত্যয় ঘটলে তা দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য বিমা সহায়তা

কার্গো ভিলেজে আমদানি পণ্য রাখার স্থানে আগুন লাগায় ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। উপদেষ্টা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ইনস্যুরেন্স কাভারেজ এবং বিমানবন্দরের নিজস্ব বিমা ব্যবস্থার আওতায় সহায়তা প্রদানের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

তদন্ত কমিটি গঠন

অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও দায়দায়িত্ব নির্ধারণে বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এছাড়া, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে পাঁচ সদস্যের আরেকটি কমিটি কাজ করছে। উপদেষ্টা বলেন, “অনুসন্ধান কমিটি আগুনের পূর্ব ও পরবর্তী অবস্থা, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করবে।”

বাণিজ্যিক কার্যক্রম অব্যাহত

উপদেষ্টা জানান, অগ্নিকাণ্ডের পরও গতকাল রাতে বাণিজ্যিক কার্গো এসেছে, এবং বাণিজ্যিক সহায়তার স্বার্থে এসব কার্যক্রম বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। তৃতীয় টার্মিনাল এলাকায় বিকল্প জায়গা দেওয়া হয়েছে, যাতে পণ্য পরিবহন চালু থাকে।

এ ঘটনায় সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র জানা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।