অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)-এর প্রশাসকের দায়িত্ব থেকে উপসচিব মোতাকাব্বীর আহমেদকে অব্যাহতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তার স্থলে নতুন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. সাইফ উদ্দিন আহম্মদ। বুধবার (২২ অক্টোবর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন-২ শাখা থেকে জারি করা এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মুহাম্মদ রেহান উদ্দিনের স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে, ড. সাইফ উদ্দিন আহম্মদকে আগামী চার মাসের মধ্যে আটাবের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। তাকে সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন, নির্বাচন পরিচালনা এবং নতুন নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে অবহিত করতে হবে। আদেশে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বাণিজ্য সংগঠন আইন, ২০২২-এর ১৭ ধারা অনুযায়ী আটাবের ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ ড. সাইফ উদ্দিনকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

মোতাকাব্বীর আহমেদের অব্যাহতির পেছনে টিকিট সিন্ডিকেট নিয়ে চলমান বিতর্কের প্রভাব রয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, তিনি প্রশাসকের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের ফ্লাইটের টিকিটের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। সাধারণত ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়া টিকিটের দাম একপর্যায়ে এক লাখ টাকারও বেশি হয়ে যায়। এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে সক্রিয় সিন্ডিকেটের সঙ্গে মোতাকাব্বীর আহমেদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়া, মোতাকাব্বীর আহমেদের বিরুদ্ধে আরও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তিনি দুই মাসের মধ্যে পরিবারসহ দুইবার লন্ডনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন বলে জানা গেছে। সরকারি আদেশে (জিও) তাকে শুধুমাত্র লন্ডন ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হলেও, তিনি অনুমতির বাইরে ইউরোপের একাধিক দেশ ভ্রমণ করেছেন। সূত্র জানায়, এই সফরে বিজনেস ক্লাসের টিকিট ব্যবহার করা হয়েছে, যার মোট মূল্য প্রায় ২২ লাখ টাকার বেশি। প্রতিটি টিকিটের মূল্য ছিল প্রায় ৩ লাখ টাকা।

এছাড়াও, টিকিট সিন্ডিকেটের মামলায় জড়িত এবং টিকিট কারসাজির কারণে লাইসেন্স বাতিল হওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে মোতাকাব্বীর আহমেদ একাধিকবার বৈঠক করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতেই তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নতুন প্রশাসক ড. সাইফ উদ্দিন আহম্মদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে আটাবের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা। এছাড়া, টিকিট সিন্ডিকেট নিয়ে চলমান বিতর্ক নিরসন এবং ভ্রমণ শিল্পের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাও তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হবে।

আটাবের সদস্য এবং ভ্রমণ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা নতুন প্রশাসকের কাছ থেকে সুশাসন ও নিরপেক্ষতার প্রত্যাশা করছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত ভ্রমণ শিল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।