Image description

বগুড়া আদমদীঘির সান্তাহারে ভলিবল গ্রাউন্ড নির্মাণাধীন কাজে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে একটি সিন্ডিকেট চক্র। তবে নির্মাণকারী ও স্থানীয় প্রতিনিধির কাছ থেকে কোন ধরণের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। একটি সিন্ডিকেট চক্রটি সুবিধা না পাওয়ায় এমন অভিযোগ করেছেন বলে জানান অনেকেই। তবে মাঠটির চলমান কাজ সম্পন্ন হলে তরুন ও যুবসমাজ উপকৃত হবে। বিভিন্ন আসক্তি বিশেষ করে মাদক, মোবাইল, ফেসবুক ও ইন্টারনেট থেকে দুরে থাকবে। এতেকরে নতুন নতুন খেলোয়ার তৈরি হবে। পড়াশুনার প্রতি মনোযোগী বাড়বে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সচেতন নাগরিক।


জানা যায়, গত কয়েকমাস আগে উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরের আদর্শপাড়া ৫নং ওয়ার্ডে ক্রীড়া প্রেমীরা একটি ভলিবল কোর্ট ও খেলার সামগ্রীর জন্য আবেদন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ে। খেলার প্রতি তাদের আগ্রহ দেখে পৌরসভার প্রশাসকের নির্দেশে প্রকৌশলী বিভাগের দায়িত্বরতরা জায়গা খোঁজ (নির্বাচন) করতে শুরু করে। ওই ওয়ার্ডে নিদিষ্ট কোন ফাঁকা জায়গা না থাকায় এলাকাবাসীর সিদ্ধান্তক্রমে সমতা ক্লাবের সামনে রেলওয়ের খেলার মাঠের পার্শ্বে একটি আন্তর্জাতিক মানের ভলিবল গ্রাউন্ড নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করে পৌরকর্তৃপক্ষ। আবেদনের ভিত্তিতে ভলিবল গ্রাউন্ড নির্মাণ প্রকল্প ব্যয় ৩ লাখ ২৪ হাজার ৫৩৫ টাকা ধরা হয়েছিলো। মাঠটিতে প্রথমে বালি ভরাট উচ্চতা ৪ ইঞ্চি, ব্রিক ওয়ার্ক উচ্চতা ১৫ ইঞ্চি এবং এরিয়া ৫৭ ফুট ৫ ইঞ্চি বাই ২৭ ফুট ১১.৫ ইঞ্চি প্রস্তাবনা অনুযায়ী কাজ শুরু করা হয়। পরবর্তীতে কাজ শুরুর পর মাঠটি যেহেতু আন্তর্জাতিক মাপের এজন্য গ্রাউন্ডটিতে জলাবদ্ধতা নিরসনে অর্থের প্রয়োজন হওয়ায় দ্বিতীয়বার আবেদন করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে আরো ১ লাখ ৯৯ হাজার ৩৫৬ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। যেখানে বালি ভরাট উচ্চতা ২০ ইঞ্চি, ব্রিক ওয়ার্ক উচ্চতা ৩০ ইঞ্চি এবং এরিয়া ৬৩ ফুট বাই ৩৩ ফুট ৫.৫ ইঞ্চি বর্ধিত করে। আন্তর্জাতিক মানের ভলিবল গ্রাউন্ড নির্মাণ ও খেলার সামগ্রীর জন্য সর্বমোট ৫ লাখ ২৩ হাজার ৮৯১ টাকা বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্পটির কাজ চলমান রাখে পৌরকর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে গত ২১ অক্টোবর উপজেলার বিভিন্ন দপ্তর ও চলমান প্রকল্প পরিদর্শনে আসেন জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা। সান্তাহার পৌরসভা পরিদর্শন শেষে প্রকল্প দর্শনে আসেন। এসময় জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা উদ্বোধন করার জন্য নির্মাণাধীন কাজে প্রাথমিক ভাবে ভলিবল মাঠ সাজানোসহ রং করা হয়। প্রকল্পটির কাজ চলাকালীন সময়ে ওই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম খোঁকনসহ স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা কোন ধরণের অভিযোগ করেনি। কিন্তু জেলা প্রশাসক উদ্বোধনের সময় প্রকল্পের কাজ সম্পর্কে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অভিযোগ করেন মেরাজ নামের এক যুবক। তার সম্পর্কে সচেতন ব্যক্তিরা জানাই তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ কর্মী ছিলেন। ইতিপূর্বে ছাত্রলীগের দলীয় প্রোগ্রামেও তাকে নেতাদের সঙ্গে দেখা গেছে। এবং বৈষম্য বিরোধী নেতৃবৃন্দের মধ্যেও বিতর্কিত নেতা। অবশেষে তাকে বৈষম্য বিরোধী কমিটি থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। 

অভিযোগ উঠেছে সিন্ডিকেট চক্রের সহায়তায় স্থানীয় খেলোয়ারদের থেকে এক প্রকার চাপপ্রয়োগ করে চলমান ভলিবল মাঠের কাজের ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। ঘটনার পর এক মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যারফলে এমন ঘটনায় অনেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

গোপন সূত্রে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারকারীদের সিন্ডিকেটের মধ্যে যদি কেউ প্রকল্পটির ঠিকাদার হতো তাহলে কোন অভিযোগই আসতোনা। আর ওই ভিডিও তৈরির আগে এবং পাশে থেকে শিখিয়ে দেওয়া হচ্ছে "বলা হচ্ছে সবাই একসাথে বলো"এস্টিমেট অনুযায়ী প্রকল্পের কাজটি সম্পন্ন করা হোক। এতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে এটি একটি সাজানো ও পরিকল্পিত। শুধু তাই নয় সান্তাহার পৌরসভার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ওই সিন্ডিকেট গ্রুপ প্রতিনিয়ত বাঁধার সৃষ্টি করে আসছে। স্থানীয় বিএনপির এক শ্রেণীর নেতারা এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে গোপনে আঁতাত রাখছেন বলে অনুসন্ধানে পাওয়া যায়।

ভলিবল কোর্টের ঠিকাদার জানান, প্রকল্পের কাজ এখনো চলমান রয়েছে। জেলা প্রশাসক স্যার আসবেন বলে উদ্বোধনের জন্য প্রাথমিক ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে নিয়মঅনুসারে কাজ পৌরসভার নিটক হস্তান্তর করা হবে। ঠিকাদারদের অনেক প্রতিপক্ষ থাকে তারা কাজ না পেলে বিরোধিতা সৃষ্টি করে। লোকজন দিয়ে হয়রানি করানো এদের মূল উদ্দেশ্য।

সান্তাহার পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত আনজুম অনন্যা জানান, পৌরসভার সুবিধাজনক জায়গা না পাওয়ায় স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মানের ভলিবল কোর্ট করতে যেরকম বাজেটের প্রয়োজন সেটি বরাদ্দ দেয়া সম্ভব না হলেও সীমিত পরিসরে খেলোয়াড়দের আবেদনের প্রেক্ষিতে জলাবদ্ধতার বিষয়টি মাথায় রেখে সংশোধিত প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ করা হয়। পাশের জমির জলাবদ্ধতা নিরসনেও পৌরসভা কাজ করবে। এখনো  ঠিকাদারদের জামানতসহ ৫০% টাকা পরিশোধ করা হয়নি। স্পেসিফিকেশন সহ কাজ শেষে তারা বাকি টাকা পাবে।