Image description

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং অস্ত্র ও মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ৫৪ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৭তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেসুর রহমান।

তিনি শনিবার রাতে জানান, ১৯ জনকে আজীবন, ৮ জনকে চার সেমিস্টার, একজনকে তিন সেমিস্টার, ১১ জনকে দুই সেমিস্টার এবং ১৫ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

জুলাই আন্দোলনে হামলার ঘটনায় আজীবন বহিষ্কৃত ১২ জন হলেন: ‘নিষিদ্ধ’ ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খলিলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক বন ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সজীবুর রহমান, সহ-সভাপতি পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিমুল মিয়া, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ইউসুফ হোসাইন টিটু, পরিসংখ্যান বিভাগের হাবিবুর রহমান হাবিব, সাংগঠনিক সম্পাদক নৃবিজ্ঞান বিভাগের ফারহান চৌধুরী আরিয়ান, বন ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের লোকমান হোসাইন, ছাত্রলীগ কর্মী সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তারেক হাসান, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ইলিয়াস সানী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সায়েদ মাজ জারদি, সিয়াম খান ও পরিসংখ্যান বিভাগের মুজাহিদুল ইসলাম সাইমুন।

অস্ত্র ও মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগে আজীবন বহিষ্কৃত হয়েছেন ৮ জন। তারা হলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের মোহাম্মদ মামুন মিয়া, ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পরিসংখ্যান বিভাগের অমিত সাহা, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের তরিকুল ইসলাম লিয়ন, ছাত্রলীগের সহসভাপতি আশিকুর রহমান আশিক, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারহান চৌধুরী আরিয়ান, পরিসংখ্যান বিভাগের মাহবুবুর রহমান, সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের মারভিন ডালি রিকি, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী শান্ত তারা আদনান।

এর মধ্যে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারহান চৌধুরী আরিয়ানকে উভয় অভিযোগে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং অস্ত্র ও মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগে ২০ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এর মধ্যে জুলাই আন্দোলনে হামলার ঘটনায় ৪ সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার হয়েছেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের আকাশ তালুকদার, ছাত্রলীগের সহসভাপতি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মাইদুল ইসলাম মুরাদ, ছাত্রলীগকর্মী বাংলা বিভাগের নাফিউজ্জমান, পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের দুর্জয় সরকার নিলয়, লোকপ্রশাসন বিভাগের মারুফ মিয়া, পেট্রোলিয়াম ও খনি প্রকৌশল বিভাগের রাফাউন জাহান মিলেনিয়াম।

অস্ত্র ও মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৪ সেমিস্টারের জন্য বাংলা বিভাগের অজয় চন্দ্র বর্মণ ও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের নিপেশ চন্দ্র ঘোপ বহিষ্কার হয়েছেন।

আন্দোলনে হামলার অভিযোগে ২ সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার হয়েছেন- ছাত্রলীগের সহসভাপতি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের রেজাউল হক সিজার, সহসভাপতি বাংলা বিভাগের মজিদুল হক, সহসভাপতি মোহাম্মদ রাকিবুজ্জামান, ইসমাইল হোসেন ও মনিরুজ্জামান মুন্না, জৈবরসায়ন ও আণবিক জীববিদ্যা বিভাগের শুভ্র রায় শ্যাম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সজীব চন্দ্র নাথ, ইংরেজি বিভাগের তাইমুর সালেহীন তাউস, পেট্রোলিয়াম ও খনিপ্রকৌশল বিভাগের শিহাব উদ্দিন মিশু, অর্থনীতি বিভাগের রেদোয়ান হোসাইন এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের আসিফুল ইসলাম।

অস্ত্র ও মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের তানভির আহমেদকে ৩ সেমিস্টার বহিষ্কার করা হয়েছে।

এছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগে ১৫ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে তদন্তের মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তারা হলেন- ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি অর্থনীতি বিভাগের মামুন শাহ, সহসভাপতি সমাজকর্ম বিভাগের আয়াজ উদ্দিন হালিম, সহসভাপতি বাংলা বিভাগের আইরিন আক্তার লিনজা, সহসভাপতি লোকপ্রশাসন বিভাগের সাইমন আক্তার, সহসভাপতি পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের রুবেল মিয়া, সহসভাপতি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের নুর মোহাম্মদ শৈশব, যুগ্ম সাধরণ সম্পাদক লোকপ্রশাসন বিভাগের সুমন মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকপ্রশাসন বিভাগের ইমামুল ইসলাম হৃদয়, যুগ্ম সধারণ সম্পাদক ইংরেজি বিভাগের আজিজুল ইসলাম সীমান্ত, সাংগঠনিক সম্পাদক পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের শুভ সাহা এবং ছাত্রলীগ কর্মী বন ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের মুজাহিদুল ইসলাম সাজ্জাদ, রসায়ন বিভাগের মেহেদী হাসান স্বাধীন, লোকপ্রশাসন বিভাগের আমিনুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মোহাম্মদ আলী মঈন এবং সমাজকর্ম বিভাগের এম এন রাখায়েত হোসেন নাবিল।

এর বাইরে হলে অস্ত্র রাখা ও মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৮ শিক্ষার্থীকে সতর্ক করা হয়েছে।

তারা হলেন- লোকপ্রশাসন বিভাগের নাদিমুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের রমজান আলী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিপন মিয়া, নৃবিজ্ঞান বিভাগের এহসান ফেরদৌস মাহিন, পরিসংখ্যান বিভাগের নাদিম হোসাইন, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সাকিব সৌরভ, গণিত বিভাগের জিহাদুল ইসলাম এবং ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ফারদিন কবির জিম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেসুর রহমান বলেন, আমরা দীর্ঘদিন সময় নিয়ে এসব শিক্ষার্থীদের বিচারের আওতায় এনেছি, যাতে কোনো নিরপরাধ শিক্ষার্থী অযথা হয়রানির শিকার না হয়। এরমধ্যে যাদেরকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তাদেরকে আমরা আত্মসমর্থনের সময় ও সুযোগ দিয়েছি। যারা সরাসরি দেখা করতে পারে নাই বা দেখা করে নাই, তাদেরকে আমরা অনলাইন প্লাটফর্মে আত্মসমর্থনের সুযোগও দিয়েছি।

সাময়িক বহিস্কার হওয়া শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, যারা সাময়িক বহিস্কার হয়েছে, তাদের বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করা হবে। এ আদেশ অব্যাহত থাকা পর্যন্ত তারা কোন ক্লাস-পরীক্ষা উপস্থিত হতে পারবে না।