পোশাক নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যে রাবি অধ্যাপকের দুঃখ প্রকাশ, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অব্যাহত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হল সংসদের নারী নেত্রীদের পোশাক নিয়ে ফেসবুকে বিতর্কিত মন্তব্যের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ. আল মামুন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্টের মাধ্যমে তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।
তার পোস্টে অধ্যাপক মামুন উল্লেখ করেন যে, তিনি সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন এবং স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের পর একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে ব্যাপক হতাশায় ভুগছেন। এই হতাশা থেকেই "ঝোঁকের বশে এমন কিছু" লিখেছেন যা লেখা উচিত হয়নি এবং তিনি তা লিখতে চাননি। পোস্টটি "মিস রিডিং" হবে বুঝতে পেরেই তিনি সঙ্গে সঙ্গে তা সরিয়ে নেন বলে দাবি করেন।
অধ্যাপক মামুন আরও লেখেন, পোশাক বিষয়ে তার ভাবনা পরিষ্কার এবং পোশাকের কারণে তিনি কাউকে বড় বা ছোট করে দেখেন না। তিনি নিজেকে হিজাবের সমর্থক হিসেবেও তুলে ধরেন এবং বলেন যে তার এমন কোনো উপহাস বা তাচ্ছিল্য করার উদ্দেশ্য ছিল না। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, পোস্টটি এক মুহূর্তে ব্যক্তিগতভাবে আরও ভাবনা-চিন্তা করার জন্য দিয়েছিলেন, কিন্তু সেই মুহূর্তেই কেউ স্ক্রিনশট নিয়ে তা ছড়িয়ে দেয়। তিনি দাবি করেন, ওই পোস্টে কোনো লাইক, কমেন্ট, শেয়ার বা ইন্টারঅ্যাকশন ছিল না।
তিনি লেখেন, "তার পরও কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে, আমি দুঃখিত। আমি সবসময়ই শিক্ষার্থীদের জন্য শুভকামনা করি। আশা করি বিভ্রান্তিকর উত্তেজনা এবার প্রশমিত হবে। আমি চাই না, আমাকে কেন্দ্র করে যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে তার প্রেক্ষিতে আমার বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী কোনো প্রকার অসুবিধার সম্মুখীন হোক, বা অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে কলহে জড়াক! শুভকামনা সবার জন্য।"
এর আগে, নারীদের পোশাক নিয়ে অধ্যাপক মামুনের বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা অধ্যাপক মামুনকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান।
বিতর্কের সূত্রপাত হয় যখন অধ্যাপক মামুন তার ফেসবুকে রাকসু হল সংসদের নারীদের শপথ গ্রহণের ছবি দিয়ে একটি পোস্ট লেখেন। পোস্টে তিনি লেখেন, "এই ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আমি এন্ডর্স করছি। কাল আমি এরকম ব্যক্তিগত স্বাধীনতা পরে ও হাতে নিয়ে ক্লাসে যাবো। পরবো টু-কোয়ার্টার, আর হাতে থাকবে মদের বোতল। মদ তো ড্রাগ না! মদ পান করার লাইসেন্সও আমার আছে! শিবির আইসেন, সাংবাদিকরাও আইসেন!"
এই পোস্টের পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে অধ্যাপক মামুন পোস্টটি ডিলিট করে দেন। এরপরই শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভের ডাক দেন। বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা জোহা চত্বরে জড়ো হন এবং সেখান থেকে পশ্চিমপাড়ায় মেয়েদের হলগুলোর সামনে দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় হল থেকে মেয়েরাও বিক্ষোভে যোগ দেন।
বিক্ষোভ শেষে রাকসুর মহিলাবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দা হাফসা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দীর্ঘদিন ধরে হিজাববিদ্বেষীদের আঁতুরঘরে পরিণত হয়েছে। তিনি অধ্যাপক মামুনের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করার দাবি জানান।
রাকসুর সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, এই মন্তব্য শিক্ষার্থীদের অস্তিত্বে, হিজাবের অস্তিত্বে এবং মুসলমানের অস্তিত্বে আঘাত হেনেছে। তিনি অধ্যাপক মামুনকে জার্নালিজম বিভাগের সামনে এসে তার বর্ণিত অবস্থায় দেখা দিতে চ্যালেঞ্জ জানান। অন্যথায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনতিবিলম্বে তাকে শোকজ করার আহ্বান জানান।
এদিকে, অধ্যাপক মামুনের বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন রাকসুর প্রতিনিধিরা।




Comments