Image description

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) নির্বাচনে নারী প্রার্থীর সংকট দেখা দিতে পারে—এমন আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পাওয়ার পর ব্রাকসু নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচারণার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে এখনো পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে কোনো নারী প্রার্থীর তেমন দেখা মেলেনি। হাতে গোনা কয়েকজন নারী শিক্ষার্থী প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বেশ কয়েকজন নারী শিক্ষার্থী এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। কেউ কেউ ইতোমধ্যে ছাত্রত্ব শেষ করেছেন। আলোচনায় রয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে জেবিন, যিনি জুলাই আন্দোলনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সক্রিয়ভাবে আওয়াজ তুলেছেন।

ব্রাকসুর অনুমোদন পাওয়ার পর উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আয়োজিত মতবিনিময় সভায় কোনো নারী শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন শহীদ ফেলানী হলের প্রভোস্ট ড. সিফাত রুমানা। তিনি বলেন, “এত বড় একটি আয়োজন, কিন্তু সভায় কোনো মেয়ে নেই—এটা হতাশাজনক।”

নারী নেতৃত্বে অনীহা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে জেবিন বলেন, অনেক সময় মেয়েরা মনে করে রাজনীতিতে যুক্ত হলে নেতিবাচক সমালোচনার মুখে পড়তে হবে। পরিবার থেকেও অনেকে নিরুৎসাহিত করে। ফলে অনেকেই এগিয়ে আসতে চায় না।

জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ঐশী বলেন, এর একটা কারণ হচ্ছে নারীরা পর্যাপ্ত মর্যাদা পায় না সামনে আসার জন্য। আর আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আমরা মনে করি রাজনীতি মানেই নেতিবাচক কোন কিছু। সুতরাং নারীকে এর সঙ্গে জড়ানোর কোন মানেই হয় না, কারণ নারী বলতে আমরা বুঝি সে সুন্দর ভাবে ঘর সামলাবে। রাজনৈতিক মাঠে নারীরা, অনিরাপদ বললেই চলে।

আরেক শিক্ষার্থী সায়মা আক্তার বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলেও গণতন্ত্রের চর্চা যে বন্ধ হয়ে যাবে, তা নয়। ছাত্র সংসদ গণতন্ত্রের অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু নির্বাচনে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম। এর পেছনে ভয়, সংশয়, লজ্জা কিংবা সামাজিক প্রতিবন্ধকতা কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে অনীহা, সময় নষ্টের আশঙ্কা, পারিবারিক সীমাবদ্ধতা বা সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি—সব মিলিয়ে নারীরা অনেক সময় পিছিয়ে পড়ে। তবে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণই পারে ব্রাকসু নির্বাচনের পথচলাকে আরও গতিশীল ও গণতান্ত্রিক করে তুলতে।

অনেকেই মনে করেন, ব্রাকসু নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসন ও শিক্ষার্থী সংগঠন উভয় পক্ষেরই উদ্যোগী হতে হবে। নইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সঙ্গে ‘রোকেয়া’ থাকলেও নারী নেতৃত্বের চর্চা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে।