Image description

জুলাই আন্দোলন চলাকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলায় মদদদাতা শিক্ষকদের বিচার দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়েছেন জাকসুর সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে কিছু শিক্ষার্থী। গত শুক্রবার থেকে ভবনটি তালাবদ্ধ রয়েছে।

এদিকে প্রশাসনিক ভবন বন্ধ থাকায় আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে প্রশাসন।

যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, ‘এটা আসলে খুবই বিব্রতকর। আগামীকাল নতুন হলগুলোতে গ্যাস সংযোগের উদ্বোধন রয়েছে। অফিস কার্যক্রম, ফাইল মুভমেন্ট, আর্থিক লেনদেন সবকিছুই এর সঙ্গে যুক্ত। সামনে ভর্তি পরীক্ষা রয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষকদের বিচারিক প্রক্রিয়াও চলমান। সব মিলিয়ে পুরো কার্যক্রমেই এর প্রভাব পড়বে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক আব্দুর রব বলেন, ‘১৫ ডিসেম্বর অফিস খোলা না থাকলে তা আমাদের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’

এদিকে শহীদ বুদ্ধীজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের আগে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, জাতীয় দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ধরনের কর্মকাণ্ড শহীদ বুদ্ধীজীবী দিবস ও বিজয় দিবস যথাযথভাবে পালনের পরিবেশ নষ্ট করছে বলেও উল্লেখ করা হয়।

প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়ার বিষয়ে জাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ওসমান হাদির ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে শুক্রবার বিকেলে আমরা প্রতিবাদ মিছিল করি। মিছিল শেষে সাধারণ শিক্ষার্থী ও জাকসুর কয়েকজন সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হামলায় মদদদাতা শিক্ষকদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেই।’ তিনি জানান, জাকসুর অধিকাংশ সদস্যের সম্মতিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

তবে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়ার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন জাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) আব্দুর রশিদ জিতু। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় থাকার সময় জানতে পারি, ওসমান হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে একটি কর্মসূচি রয়েছে। পরে জাকসুর পক্ষ থেকে আমি সংহতি জানাই। সন্ধ্যায় এক সাংবাদিকের প্রশ্নের মাধ্যমে জানতে পারি যে রেজিস্ট্রার ভবনে তালা দেওয়া হয়েছে। কে বা কারা তালা দিয়েছে, সে বিষয়ে আমাকে কেউ অবগত করেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি জাকসুর ভিপি হয়েও যদি না জানি, তাহলে এটা জাকসুর সিদ্ধান্ত বলা যায় না। জাকসুর পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি হলে সকল সদস্যেরই তা জানা উচিত। দুই-তিনজন সদস্য গিয়ে তালা দেওয়ার পর জাকসুর নাম ব্যবহার করলে সেটি জাকসুকে ছোট করা হয়।’

এদিকে মধ্যরাতে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের দেওয়া বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলন করেন জাকসুর নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে হামলায় যেসব শিক্ষক-কর্মচারী সরাসরি জড়িত ছিলেন, তাঁদের বিচার নিয়ে আন্দোলন ও সংগ্রাম চলমান ছিল। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিচার করতে পারেনি প্রশাসন। প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই বিচার সম্পন্ন হয়নি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জাকসুর পক্ষ থেকে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়া হয়েছে। এর পেছনে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য নেই।