Image description

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছেন, ‘১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল এ দাবি রীতিমতো অবান্তর।’ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি আরও বলেন, পরাজয় নিশ্চিত জেনে পালানোর সময় পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে-এমন ধারণা যুক্তিসংগত নয়।

আজ রোববার দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দপ্তরে ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

উপ-উপাচার্য শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অন্য একটি দেশের করতরাজ্যে পরিণত করার জন্য বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। আজও আমরা জহির রায়হানকে খুঁজে পাইনি। যদি তাঁকে খুঁজে পাওয়া যেত, তাহলে প্রকৃত ইতিহাস জানা সম্ভব হতো।’

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যার বিষয়েও সংশয় প্রকাশ করেন উপ-উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি একটি টেলিভিশন টক শোতে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে যুক্ত সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানের বক্তব্য শুনেছেন, যেখানে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে পূর্ববর্তী দাবিকে রেটরিক বা আলংকারিক বক্তব্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।’

তিনি ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর কী ঘটেছিল তা অনুসন্ধানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের আহ্বান জানান। তাঁর ভাষায়, আজ পর্যন্ত শহীদের তালিকা হয়নি, রাজাকারের তালিকাও হয়নি। বক্তব্যের পর বক্তব্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত ও বিভক্ত করা হয়েছে।

উপ-উপাচার্য আরও বলেন, বাংলাদেশে সংঘটিত অনেক হত্যাকাণ্ডে প্রথমে এক পক্ষকে দায়ী করা হলেও দীর্ঘ সময় পর প্রকৃত ঘটনা ভিন্নভাবে প্রকাশ পায়। একের পর এক বয়ান তৈরি করে জাতিকে পদাবনত করার আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন। এর আগে তিনি বিএনপি ও জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন হিসেবে পরিচিত ‘সাদা দল’-এর আহ্বায়ক ছিলেন। তবে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের আলাদা সংগঠন ‘জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম’-এর নেতারা দাবি করেন, সাদা দল মূলত জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন। সঞ্চালনায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী। প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার। 

অন্যদিকে, সভায় উপস্থিত বনবিদ্যা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আল আমিন, যিনি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি, উপ-উপাচার্যের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী এবং তাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর ও আলশামস পরিকল্পিতভাবে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। পরাজয় নিশ্চিত জেনে তারা স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার উদ্দেশ্যেই এ হত্যাকাণ্ড চালায়।’