রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আওয়ামীপন্থি ছয় ডিনের পদত্যাগের দাবিতে তাদের চেম্বারে তালা ঝুলিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। রোববার দুপুরে সিনেট সদস্য আকিল বিন তালেব, রাকসুর সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক জায়িদ হাসান জোহা, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক রাকিবুল হাসানসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী ডিনদের চেম্বারে তালা ঝোলান।
ডিনদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও প্রশাসন সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তারা এই পদক্ষেপে যান বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। আকিল বিন তালেব বলেন, ‘আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে শহীদ হাদি ভাই আমাদের যে পথ দেখিয়েছে আমাদের সেই পথ অনুসরণ করতে হবে।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান জানান, ডিনরা পদত্যাগ করেননি।
অন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কয়েকজন জানান, ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ডিন নির্বাচনে ১২টি অনুষদের মধ্যে ছয়টিতে জয়লাভ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ (হলুদ প্যানেল)। জয়ী অনুষদগুলো হলো আইন, বিজ্ঞান, ব্যবসা শিক্ষা, সামাজিক বিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং ভূ-বিজ্ঞান।
সময়সীমা অনুযায়ী গত ১৭ ডিসেম্বর তাদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
শিক্ষার্থীরা বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসুদ ও উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীবের সিদ্ধান্তে এই সময় বর্ধিত করা হলেও তাদের পদত্যাগের দাবি তোলেন রাকসুর জিএস সালাউদ্দিন আম্মার।
রোববার সকালে আম্মার কয়েকজন ডিন এবং আওয়ামীপন্থি কয়েকজন শিক্ষকের চেম্বারেও যান। তবে এ দিন কোনো ডিন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না।
আম্মার সাংবাদিকদের বলেন, ‘জুলাইয়ের সময় শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে দাঁড়ানো শিক্ষকদের তালিকা ডকুমেন্টসসহ আমরা তালিকা করেছি। আওয়ামীপন্থি যে ডিনরা আছেন, সেই ডিনদের পদত্যাগ প্রসঙ্গে তাদের সবাইকে কল দেওয়া হয়। তাদের কেউই ক্যাম্পাসে নাই। আমরা অন্যান্যদের সঙ্গে মিলিয়ে চূড়ান্ত এই তালিকা প্রকাশ করবো এবং সেই অনুযায়ী তাদের পদত্যাগে বাধ্য করাবো।’
ডিনদের পদত্যাগের বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান মিডিয়াকে বলেন, ‘আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য এখনও আসেনি। ডিনদের মেয়াদ শেষ হলেও সমাবর্তন ও সামনে ভর্তি পরীক্ষাসহ নানা কারণে তাদের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। সামনে পরীক্ষা রেখে একজন তাদের অব্যাহতি দেওয়া হলে অনেক জটিলতা তৈরি হবে। তবে উপাচার্য স্যার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে পারবেন।’
ডিনরা পদত্যাগ করেছে কি-না জানতে উপাচার্য সালেহ হাসান নকীবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া মেলেনি।
রাবি সিনেট সদস্য আকিল বিন তালেব বলেন, ‘বিপ্লবের এক বছর পেরিয়ে গেলেও আওয়ামী ফ্যাসিস্টের দোসররা আজও ক্যাম্পাসে নিরাপদ। অথচ আমাদের বিপ্লবের নেতৃত্ব দেওয়া মানুষরা রাস্তায় গুলি খেয়ে জীবন দিচ্ছে। তাই আমরা চাই, কোনো ফ্যাসিবাদের দোসররা যেন বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিতে না পারে। রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে রাবি প্রশাসন আসলেও বিপ্লবের স্পিরিট তারা ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জন্য ব্যানার ধরা ফ্যাসিস্টের দোসরদের তারা এখনও বিচার করতে পারেনি।
‘আমরা প্রশাসনকে সময় দিয়েছিলাম কিন্তু তারা এই ফ্যাসিস্টদের পদত্যাগ করাইতে পারেনি। তাই আমরা অভ্যুত্থানের শক্তিরা আজ এই ফ্যাসিস্টদের পদত্যাগ করাইতে বাধ্য হচ্ছি।’
তবে ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ জানান, এই দাবিতে রাকসুর সমর্থন থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে রাকসুর কোনো এজেন্ডা বা সিদ্ধান্ত হয়নি।
তিনি বলেন, রাকসুও ডিনদের পদত্যাগ চায়। ইসলামি ছাত্রশিবির অনেক আগে থেকেই এই দাবি জানিয়ে আসলেও প্রশাসন এই বিষয়ে নিরুত্তর ছিল।’
রাকসুর অবস্থানের বিষয়ে কোনো বৈঠক বা অধিবেশন হয়েছে কি-না জানতে চাইলে জাহিদ মিডিয়াকে বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কোনো বৈঠক হয়নি। কর্মসূচিগুলো আম্মার (জিএস) ব্যক্তিগত জায়গা থেকে দিয়েছে। রাকসু এগুলোর বিরোধিতা করছে না।




Comments