
নিখোঁজ নার্গিস আক্তারের বড় বোন লাইজু বেগম বলেন, ‘আজ (গতকাল) সকাল পৌনে ৮টায় আমার বোন কাজে গিয়েছিল। সাড়ে ১১টার দিকে খবর পেলাম আগুন লেগেছে। তখনই জানতে পারি কেউ ভেতর থেকে বের হতে পারেনি। এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ নেই।’
১৪ বছর বয়সী ভাগ্নি মাহিরার খোঁজে ঘটনাস্থলে ছোটাছুটি করছিলেন মো. শফিকুল ইসলাম। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার ভাগ্নি মাহিরা ওই কারখানার তিনতলায় কাজ করত। আগুন লাগার পর থেকেই খুঁজছি। কোনো হাসপাতালেও পাইনি। ফায়ার সার্ভিস বলেছে ধৈর্য ধরতে।’
অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনায় স্বামী নাজমুল আলমকে খুঁজে পাননি তার স্ত্রী নাসিমা আক্তার। সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলের পাশের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে কান্না করছিলেন তিনি। নাসিমা জানান, তার স্বামীর গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। তিনি কারখানাটির দ্বিতীয়তলায় অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার স্বামী কল করেছিলেন। তখন তাকে জানান যে, তাদের কারখানায় আগুন লেগেছে। এরপর থেকে আর কথা হয়নি। এরপর বহুবার সেই ফোনে কল করলেও কোনো সাড়া মিলছে না। নাসিমা আরও জানান, তিনি এ ঘটনার পর ঘটনাস্থলে আসেন। কিন্তু স্বামী নাজমুলকে খুঁজে না পেয়ে নিকটস্থ সব হাসপাতালে ছুটে বেড়ান। কিন্তু কোথাও তাকে পাননি।
একই কারখানায় কাজ করেন মার্জিয়া সুলতানা আলো ও জয় দম্পতি। অগ্নিকাণ্ডের পর তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে জানালেন স্বজনরা।
আলোর ভাই মোহাম্মদ হাসান বলেন, ছয় মাস আগে বোনের বিয়ে হয়। একই কারখানায় কাজ করার সুবাদে তাদের পরিচয়। আমি জানি না বোন ও দুলাভাইয়ের ভাগ্যে কী ঘটেছে।
খালিদ হাসান সাব্বির গার্মেন্টসের তৃতীয় তলার স্টোররুমে কাজ করেন। তার চাচা শাকিল আহমেদ জানান, সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটেও তার ফোনে কল গেছে। তবে কোনো উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা তাকে সব হাসপাতালে খুঁজেছি, কিন্তু পাওয়া যায়নি।
মোহাম্মদ আলিম (১৩) পোশাক কারখানায় সহায়কের কাজ করে। তার ছবি নিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গিয়ে নানাজনকে জিজ্ঞাসা করছিলেন মাসহ অন্য স্বজনরা। তারা জানালেন, ঢাকা মেডিকেলসহ অন্যান্য হাসপাতালগুলোতে তাকে খুঁজেছেন, কিন্তু পাননি।
আলিম তার মা এবং দুই ভাইসহ রূপনগর আবাসিক এলাকার ২৫ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে বাস করে বলে জানান তাদের প্রতিবেশী মিতু বেগম।
প্রত্যক্ষদর্শী আবদুল জলিল বলেন, রাসায়নিকের গুদামে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। আগুনের লেলিহান শিখা আতশবাজির মতো উপরের দিকে উঠে যায়। তখন আগুনের গোলা গিয়ে সামনের ভবনটিতে পড়ে। চারতলা ভবনের নিচতলায় এমব্রয়ডারি কারখানা, দোতলায় কাপড়ে স্ক্রিনপ্রিন্ট করার কারখানা, তৃতীয় তলায় গার্মেন্টস এবং চতুর্থ তলায় গার্মেন্টসের গুদাম। ওই ভবনে যে আগুন লেগেছে তা প্রথমে কেউ বুঝতে পারিনি। তাই সেদিকে কেউ নজর দেয়নি। ততক্ষণে ভেতরে থাকা লোকজন পুড়ে মারা যায়।
আগুন লাগা পোশাক কারখানার পেছনের তিন তলা ভবনে একটি ওয়াশিং প্ল্যান্ট। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মো. রাজীব জানান, আগুন লাগার পর তাদের তিন তলা ভবনের ছাদ থেকে পোশাক কারখানা ভবনের চতুর্থ তলার দেয়াল ভেঙে দেন। এতে চারতলার ছয়জন বের হয়ে আসতে পারেন। আগুনে ভবনের সামনে থাকা তিনটি মোটরসাইকেল ও একটি কাভার্ড ভ্যান পুড়ে যায়।
Comments