ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী শরীফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে এবং খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।
জুমার নামাজ শেষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে ‘বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস’ একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করে। ‘শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার, দ্রুত বিচার, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি’ শীর্ষক ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয়। একই সময়ে খেলাফত মজলিসের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখাও হাদি হত্যার বিচার দাবিতে পৃথক বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
দুপুর দেড়টার দিকে শাহবাগ চত্বরে জুমার নামাজ আদায় করেন কয়েক হাজার মানুষ। নামাজ শেষে শহিদ ওসমান হাদিসহ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সকল শহিদ ও আহতদের জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে ইমাম বলেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি আমাদের ওসমান হাদি ভাইকে শহিদ হিসেবে কবুল করুন। তার জীবনের সব ভুল-ভ্রান্তি মাফ করে তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন।’ দোয়াতে আবরার ফাহাদ, মুগ্ধ ও আবু সাঈদসহ সকল শহিদের রুহের মাগফেরাত কামনা করা হয়।
ওসমান হাদি হত্যার প্রতিবাদে এবং ‘ভারতীয় আগ্রাসন’ প্রতিরোধের ডাক দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। জুমার নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে ‘জাতীয় আজাদী আন্দোলন’-এর ব্যানারে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান বলেন, ‘হাদি কথা রেখেছেন, তিনি শহিদি মৃত্যুকে বরণ করেছেন। তিনি জুলাই বিপ্লবকে বিক্রি হতে দেননি এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের কাছে মাথা নত করেননি। হাদি একজন হতে পারেন, কিন্তু আজ ঘরে ঘরে লাখো হাদি জন্ম নিয়েছে।’ সমাবেশ থেকে ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’, ‘ফেলানী থেকে হাদি আজাদী আজাদী’ এবং ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগানে ক্যাম্পাস মুখরিত হয়ে ওঠে।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণা শেষে ফেরার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হন শরীফ ওসমান হাদি। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে (এসজিএইচ) নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
শহিদ ওসমান হাদির মরদেহ বহনকারী বিমানটি শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ সিঙ্গাপুর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে। সেখান থেকে তার মরদেহ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে নিয়ে যাওয়া হবে। হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং বিচার দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।




Comments