প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলার ঘটনার রাতে পুলিশের ভূমিকা কেন ‘নিষ্ক্রিয়’ ছিল, তার ব্যাখ্যা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। পুলিশের দাবি, সেই রাতে বড় ধরনের রক্তপাত ও প্রাণহানি এড়াতেই তারা ‘সর্বোচ্চ হার্ড লাইনে’ যায়নি।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এস এন মো. নজরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। এসময় তিনি হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৭ জনকে গ্রেপ্তারের তথ্যও তুলে ধরেন।
অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, “প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনায় পুলিশের প্রধান লক্ষ্য ছিল কোনোভাবেই যেন মানুষের প্রাণের ক্ষতি না হয়। সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব, কিন্তু হিউম্যান লাইফ একবার হারিয়ে গেলে তা আর ফিরে পাওয়া যায় না। রক্তপাত ছাড়া পরিস্থিতি সামাল দিতে পারাকেই আমরা অর্জন হিসেবে দেখছি।”
তিনি আরও বলেন, “কারওয়ান বাজারে সেই রাতে ৪-৫ হাজার মানুষের জনবল ছিল। সেখানে আমাদের মাত্র ৫০-১০০ জন পুলিশ সদস্য দিয়ে সর্বোচ্চ অ্যাকশনে (গুলি) গেলে বড় ধরনের হতাহতের আশঙ্কা ছিল। পুলিশ ও পাবলিক উভয় পক্ষেই ক্যাজুয়ালিটি হতে পারত।”
হামলার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এখন পর্যন্ত ৩১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএমপি। এর মধ্যে ১৭ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন- মো. নাইম, মো. আকাশ আহমেদ সাগর, মো. আব্দুল আহাদ, মো. বিপ্লব, মো. নজরুল ইসলাম মিনহাজ, মো. জাহাঙ্গীর, মো. সোহেল রানা, মো. হাসান, রাসেল ওরফে শাকিল, মো. আব্দুল বারেক শেখ আলামিন, রাশেদুল ইসলাম, সোহেল রানা, শফিকুল ইসলাম, মো. প্রান্ত ওরফে ফয়সাল আহমেদ প্রান্ত, আবুল কাসেম, রাজু হোসাইন ও মো. সাইদুর রহমান।
গ্রেপ্তারদের রাজনৈতিক পরিচয় প্রসঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “তারা যে দলেরই হোক, আমরা তাদের ‘দুষ্কৃতিকারী’ হিসেবে দেখছি। তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে এবং প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় তাদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।”
মব ভায়োলেন্স ঠেকাতে পুলিশের সক্ষমতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা সক্ষম। তবে সব জায়গায় ফায়ার ওপেন করা উচিত নয়। তাছাড়া পুলিশ বাহিনী গত এক বছর ধরে একটি বিরাট মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সামনে নির্বাচন। এই সময়ে যদি নতুন করে পুলিশের ক্যাজুয়ালিটি হতো, তবে এই বাহিনীকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া কঠিন হতো।”
তিনি আরও দাবি করেন, পুলিশ ঘটনার আগেই সেখানে পৌঁছেছিল এবং উত্তেজিত জনতাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছিল। এমনকি এক পর্যায়ে পুলিশ অনুনয়-বিনয়ও করেছিল, কিন্তু বিশৃঙ্খল জনতার সামনে সেই শক্তি পর্যাপ্ত ছিল না।
সংবাদমাধ্যমের ওপর এই নজিরবিহীন হামলার ঘটনায় পেনাল কোড, বিশেষ ক্ষমতা আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইন এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা এই হামলায় ইন্ধন দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
অন্যান্য হামলার বিষয়ে তিনি জানান, ছায়ানট ও উদীচীতে হামলার ঘটনায় যথাক্রমে ধানমন্ডি ও শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে, যার বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
উল্লেখ্য, ১৮ ডিসেম্বর রাতে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শাহবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ শুরু হয়। সেই ক্ষোভের রেশ ধরে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।




Comments