Image description

শহিদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. শামীম উদ্দিন খানের পদত্যাগের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। 

সোমবার দুপুরে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে শামীম উদ্দিন খানকে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে বলেন।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, নারী অঙ্গনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন।

চবি ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, শহিদ বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে দেয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকদের টাকায় বিশ্ববিদ্যালয় চলে, কোনো রাজাকারের টাকায় নয়। একজন উপ-উপাচার্য এ ধরনের মন্তব্য করতে পারেন না। তাই তাকে পদত্যাগ করতে হবে।

চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার বলেন, আমি একটা প্রোগ্রাম আছি এ মুহূর্তে আমি কোন মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। 

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি জশদ জাকির মনে করেন, উপ-উপাচার্য শামীম উদ্দিন খানের এ বক্তব্য রাজাকারদের পক্ষে বয়ান তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। এটি ঘৃণ্য ও লজ্জাজনক। গতকালের বিক্ষোভ সমাবেশের ধারাবাহিকতায় আজ প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়া হয়েছে।

প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়ার পর নারী অঙ্গনের প্রতিনিধি সুমাইয়া সিকদার বলেন, “একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে প্রো-ভিসি স্যারের এ ধরনের মন্তব্য কোনোভাবেই সমীচীন নয়। এতে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হেয় করা হয়েছে। আমরা তার পদত্যাগ চাই, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন স্পর্ধা দেখাতে না পারে।”

গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনীর দায় স্বীকৃত হলেও উপ-উপাচার্য শামীম উদ্দিন খান তা অস্বীকার করে বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা মনে করি, গণহত্যাকারীদের দায়মুক্ত করার উদ্দেশ্যেই তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। তিনি ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে।”

বেলা ১টার দিকে প্রশাসনিক ভবনে ঝোলানো এ তালা বিকাল সাড়ে ৪টাতেও খোলা হয়নি।

এসময় উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ তাদের কক্ষে অবস্থান করছিলেন বলে জানা গেছে।

গতকাল বুদ্ধিজীবী দিবসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যলয় প্রশাসন আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার বিষয়টি ‘অবন্তর’ বলে মন্তব্য করেন উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান।

তিনি বলেন, “যে সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা আমাদের দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছে, সে সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে; আমি মনে করি এটি রীতিমত অবান্তর। কারণ, ওই সময় তারা তাদের জীবন শঙ্কায় ছিলেন।”

শামীম উদ্দিন খানের এ বক্তব্যের পর রাতেই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন স্থানে তার সমালোচনা শুরু হয়।