Image description

কুষ্টিয়ার খোকসায় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা জামায়াত কর্মীকে লঘুদণ্ড দিয়ে ‘মীমাংসা’ করেছেন দলীয় নেতারা। সপ্তাহখানেক আগের ঘটনাটি গতকাল রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানাজানি হয়। ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে জামায়াতের এক নেতাকে বলতে শোনা গেছে, ‘ধর্ষকের অভিভাবকেরা জুতা দিয়ে পিটিয়ে ঠিক (মীমাংসা) করে দিয়েছেন।’ 

তবে পুলিশের এক কর্মকর্তার ভাষ্য, ভুক্তভোগীর শিশুর পরিবারকেও টাকার লোভ দেখিয়ে মামলা থেকে দূরে রাখা হয়। 

উপজেলার গোপগ্রাম ইউনিয়নের একটি গ্রামে ১২ অক্টোবর দিনের বেলায় তৃতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয় বলে স্বজনের অভিযোগ। ভিডিওতে শিশুটির চাচিকে বলতে শোনা যায়, তিন শিশু স্থানীয় মাদ্রাসার ছাদে বসে খেলা করছিল। সেখানে আমির হোসেন হাজির হন। শিশুদের ভুলিয়ে-ভালিয়ে মোবাইলে অশ্লীল ভিডিও দেখান তিনি। অন্য শিশুরা পালিয়ে গেলেও লালসার শিকার হয় তাঁর ভাতিঝি তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীটি। তাকে (শিশুটিকে) বাড়ি নিয়ে যৌন নির্যাতন করেন আমির। একপর্যায়ে শিশুটি নিজ বাড়ি ফিরে ঘটনা জানায়। এ নিয়ে ভুক্তভোগী শিশুটির পরিবার থানায় যেতে চেয়েছিল। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তি তাঁর রাজনৈতিক দলের লোকদের দিয়ে সালিশে বসতে বাধ্য করেন। সেখানে দেওয়া রায় তারা মানতে পারেনি। কিন্তু কার কাছে বিচার চাইতে যাবেন। যেখানে যাচ্ছে সেখান থেকে ফিরে আসতে হচ্ছে।

এলাকাবাসী জানান, ঘটনার পরদিন (১৩ অক্টোবর) রাত ১০টার পর জামায়াতে ইসলামীর কর্মী আমির হোসেনের (৬৩) বাড়িতে দলীয় নেতারা সালিশ বসান। সেখানে উপজেলা জামায়াতের আমির মো. নজরুল ইমলাম, গোপগ্রাম ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আলতাফ হোসেন, স্থানীয় বাসিন্দা মুরশিদ, দুখু মিয়াসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। একপর্যায়ে আমির হোসেনকে জুতাপেটা করে সালিশ শেষ করা হয়। এমনকি সালিশকারীরা অভিযুক্ত আমির হোসেন ও শিশুর বক্তব্যও মোবাইল ফোনে ভিডিও করেন।

প্রতিবেশীরা জানান, আমির হোসেন জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক। তার ছেলেও ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে জড়িত ছিল। 

সালিশে লঘুদণ্ডের বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি ভুক্তভোগী শিশুটির মা-বাবা। এ ঘটনায় ন্যায়বিচার দাবি করা তাদের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এতে শিশুটির মাকে বলতে শোনা যায়, ধর্ষকের যে বিচার হয়েছে তাতে তারা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এমন লোকদের দিয়ে বিচার করিয়েছেন, যেখানে কথা বলার সুযোগ নেই। 

আমির হোসেনের স্ত্রী ওই ভিডিওতে বলেন, তাঁর স্বামী মাপ চেয়ে নিয়েছেন। অভিযুক্তের ছেলে দাবি করেন, তাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়েছে। ওই শিশুর বাবার সঙ্গে তাদের জমি নিয়ে বিরোধ আছে। তাই ধর্ষণের নাটক সাজিয়েছে।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে হাসিমুখে কথা বলতে দেখা যায়- উপজেলা জামায়াতের আমির নজরুল ইসলামকে। তিনি বলছিলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনা সালিশ হয় না। দুই পক্ষ তাকে ধরায় বিষয়টি নিয়ে সালিশে বসেছিলেন। আমির হোসেনকে তার পরিবারের মুরব্বিরা চড়থাপ্পর দিয়ে মিটমাট করে নিয়েছে।’ 

খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মঈনুল ইসলাম রোববার রাতে বলেন, ওই শিশুর একটি বক্তব্যের ভিডিও শোনার পর তিনি পুলিশ পাঠিয়েছিলেন। শিশুটির বাবা জানান, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। তিনি আরও বলেন, যদি এ অপরাধ ঘটেও থাকে, তা সালিশযোগ্য নয়। স্পর্শকাতর এই বিষয়টি ভালো করে খতিয়ে দেখবেন। 

সোমবার দুপুরে ওসি জানান, ধর্ষণের শিকার শিশুর বাবাকে থানা আনা হয়েছে। তিনি মামলা করবেন। আসলে মেয়েপক্ষকে টাকার লোভ দেখানো হয়, তারাও সেই ফাঁদে পা দেয়। মামলা নথিভুক্ত হলেই আসামি ধরার অভিযান চালানো হবে।