সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় আলুচাষিরা লোকসানে: হিমাগারে পড়ে আছে লক্ষ লক্ষ টন আলু

সরকারের প্রতিশ্রুত আলু কেনা শুরু না হওয়ায় দেশের আলুচাষিরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন। গত ২৭ আগস্ট সরকার কেজিপ্রতি আলুর সর্বনিম্ন বিক্রয়মূল্য ২২ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও, বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। বর্তমানে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ১১ থেকে ১২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা খুচরা বাজারে ২০ টাকায় মিলছে। অথচ এক মাস আগেও আলুর কেজি ছিল ২৫ টাকা।
কৃষি মন্ত্রণালয় চাষিদের লোকসান থেকে বাঁচাতে ৫০ হাজার টন আলু কেনার উদ্যোগের কথা জানিয়েছিল, কিন্তু সেই উদ্যোগ এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এবং ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের এই সময়ে আলুর দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, যা এ বছর প্রায় ৬১ শতাংশ কমেছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারেও আলুর দাম কমেছে। পাইকারি বিক্রেতা ওবাইদুল হক জানান, হিমাগারে এখনো প্রচুর আলু মজুত থাকায় সরবরাহ চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি, যার ফলে দাম কমেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানিয়েছে, গত মৌসুমে দেশে রেকর্ড ১ কোটি ১৫ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে, যেখানে দেশের চাহিদা প্রায় ৯০ লাখ টন। এর ফলে বিশাল পরিমাণ আলু উদ্বৃত্ত হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু জানান, এখনো প্রায় ১২ লাখ টন আলু হিমাগারে পড়ে আছে। বিক্রির জন্য হাতে আছে সর্বোচ্চ আড়াই মাস। হিমাগারে প্রতি কেজি আলুর দাম এখন ১০ থেকে ১২ টাকা, যা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অর্ধেক। তিনি আরও অভিযোগ করেন, সরকার আলুর দাম নির্ধারণ এবং কেনার ঘোষণা দিলেও তা বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
টিসিবি চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ফয়সাল আজাদ অবশ্য জানিয়েছেন, সরকার এই মাসের শেষ থেকে আলু কেনা শুরু করবে। কিন্তু এই বিলম্ব চাষিদের জন্য বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চলতি পরিস্থিতি আলুচাষিদের মধ্যে ব্যাপক হতাশা সৃষ্টি করেছে। তারা সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন, যাতে তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত হয় এবং লোকসান থেকে বাঁচানো যায়।
Comments