
দেশে টানা বাড়ছে স্বর্ণের দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাঁচ দফায় দাম বাড়ার পর এখন ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। সর্বশেষ ১৪ অক্টোবর ভরিপ্রতি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম এক লাফে সাড়ে চার হাজার টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই লাখ ১৪ হাজার টাকায়। একই সঙ্গে বেড়েছে রুপার দামও।
বিয়ের মৌসুম সামনে রেখে বাজারে স্বর্ণ কেনাবেচা জমে উঠলেও ক্রেতারা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। হঠাৎ এভাবে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধিকেই দায়ী করছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামের এই উর্ধ্বগতি নিয়ে শুক্রবার এক প্রতিবেদনে ব্লুমবার্গ জানায়, গোটা বিশ্ব এখন এক ধরনের ‘স্বর্ণ-জ্বরে’ আক্রান্ত। আর্থিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়লে মানুষ নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকে পড়ে। আগে এ ভূমিকা পালন করত মার্কিন ডলার, কিন্তু এখন সেই আস্থায় ফাটল ধরেছে।
ব্লুমবার্গের জানায়, ‘এখন আর সেই দিন নেই, এখন মানুষ স্বর্ণ কেনে।’
২০২৩ সালের শেষ দিক থেকে স্বর্ণের দাম দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে প্রতি আউন্স (২৮.৩৫ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ২০০ ডলার ছাড়িয়েছে। রুপার দামও গত চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এইচএসবিসি ব্যাংকের হিসাবে, আগামী বছর প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে।
চীন, ভারত, ব্রাজিল ও উজবেকিস্তানসহ একাধিক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ব্যাপক হারে স্বর্ণ কিনছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি বিশ্বব্যাপী প্রচলিত ডলারভিত্তিক আর্থিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতার স্পষ্ট ইঙ্গিত।
২০২২ সালে রাশিয়ার রিজার্ভ জব্দের পর থেকেই শুরু হয় ‘ডি-ডলারাইজেশন’ বা ডলারের ওপর নির্ভরতা কমানোর প্রবণতা। যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি ঋণ, মূল্যস্ফীতি ও রাজনৈতিক চাপের কারণে ডলারের প্রকৃত মানও কমছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
তাদের ভাষায়, সরকার যত খুশি টাকা ছাপাতে পারে, কিন্তু স্বর্ণ তৈরি করতে পারে না—এই বিশ্বাসই স্বর্ণকে করেছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সম্পদ।
বিশ্বজুড়ে চলমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা স্বর্ণের দাম আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বা বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমিত হলে দাম কিছুটা কমতে পারে।
চলতি অক্টোবরেই দেশে ভরিপ্রতি ২১ হাজার টাকা এবং সেপ্টেম্বরে ১৬ হাজার টাকা বেড়েছে স্বর্ণের দাম। বিশ্লেষকদের মতে, এ প্রবণতা শুধু বাজারের নয়। এটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতারই প্রতিফলন।
Comments