বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করছেন উদ্যোক্তারা৷ কয়েকশ কারখানা বন্ধ ও লাখো শ্রমিক বেকার হয়েছেন বলে তথ্য দিচ্ছেন তারা৷ তবে রপ্তানির পরিসংখ্যানে পরিস্থিতি ততটা খারাপ দেখছেন না অর্থনীতিবিদরা৷
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি কারখানা বন্ধের খবর পাওয়া গেছে৷ ফলে চাকরি হারাচ্ছেন সেসব কারখানার শ্রমিকেরা৷ আগের মাসগুলোর প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় থাকলেও টানা তিন মাস ধরে রপ্তানিতে নেতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ এর মধ্যে বিমানবন্দরের কার্গো হাউজের আগুনে পুড়ে ৫১৬টি কারখানার ১০০ কোটি টাকার বেশি মালামাল পুড়েছে বলে দাবি করেছেন পোশাক শিল্পের মালিকেরা৷
পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ'র সভাপতি মাহমুদ হাসান বাবু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আসলে এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি৷ একেবারে যে খুব খারাপ অবস্থায় চলে গেছি, বিষয়টি এমন না৷ তবে এই ১৪ মাসে আরও ভালো করার সুযোগ ছিল৷ বিশেষ করে চীন ও ভারতের উপর যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ফলে আমরা বেশ কিছু সুবিধা পেতে পারতাম৷ কিন্তু সেই সুযোগ আমরা হাতছাড়া করেছি৷ বিশেষ করে এক ধরনের অভিভাবকশূন্য অবস্থায় আমরা আছি৷ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার জন্য আমরা বারবার চিঠি দিয়েছি, কিন্তু সেখান থেকে কোন সদুত্তর বা দেখা করার সুযোগ পাইনি৷''
তবে এ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, কয়েকদিন আগেও প্রধান উপদেষ্টার সামনে তিনি বক্তব্য দেয়ার সুযোগ পেয়েছেন৷ এ প্রসঙ্গে মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘‘প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব একটি দায়িত্বশীল পদ৷ তিনি আমার কথা না বুঝে যেটা বলেছেন সেটা ঠিক হয়নি৷ আমি বলেছি, নবনির্বাচিত বিজিএমইএর কমিটি নিয়ে দেখা করার সুযোগ চেয়েও পাইনি৷ উনি উল্টোটা বুঝেছেন৷''
তবে কিছু কারখানা বন্ধ হওয়াকে খারাপ কিছু নয় বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম৷ কয়েকদিন আগে তিনি বলেছেন, ‘‘নন-কমপ্লায়েন্স কারখানা বন্ধ হওয়া খারাপ কিছু নয়৷ এটি শিল্পের সুষ্ঠু ও টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ৷''
তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্প, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান ভিত্তি ও কর্মসংস্থানের অন্যতম বড় উৎস৷ খাত সংশ্লিষ্টদের হিসাবে বর্তমানে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ সরাসরি এবং আরও প্রায় দুই কোটি মানুষ পরোক্ষভাবে এই খাতের ওপর নির্ভরশীল৷ বিজিএমইএ-এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪ মাসে সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে মোট ৩৫৩টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে এক লাখ ১৯ হাজার ৮৪২ জন শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন৷
সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে সাভারে, যেখানে ২১৪টি কারখানা বন্ধ হয়েছে, এর মধ্যে ১২২টি স্থায়ীভাবে এবং ৯২টি অস্থায়ীভাবে৷ প্রায় ৩১ হাজার শ্রমিক এখানে কাজ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ছেইন অ্যাপারেলস, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন ও সাফওয়ান আউটারওয়্যারের মতো বড় কারখানাও রয়েছে৷ গাজীপুরে ৭২টি কারখানা বন্ধ হয়ে ৭৩ হাজারেরও বেশি শ্রমিক বেকার হয়েছেন, যেখানে বেক্সিমকো গ্রুপের ১৩টি পোশাক কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়া বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা দিয়েছে৷
বিজিএমএমইএ'র সাবেক সহ-সভাপতি এ বি এম শামসুদ্দিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যদি সত্যি কথা বলি, তাহলে বাংলাদেশের গার্মেন্টস মালিকেরা ভালো নেই৷ নির্বাচিত সরকারের দিকে চেয়ে বসে আছে বায়াররা৷ ছোট ফ্যাক্টরিগুলো টিকতে পারছে না৷ তারা বন্ধ করে চলে যাচ্ছে৷ এর মধ্যে সরকার শ্রম আইন সংশোধন করে আরেক বিপদ তৈরি করেছে৷ আসলে এখানে আমাদের কোনো অভিভাবক নেই৷ এতিমের মতো টিকে আছে সেক্টরটি৷''
বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আখতার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে তো শ্রমিকরাও অংশ নিয়েছিলেন৷ বৈষম্য নিরসনের যে দাবিতে আন্দোলন হয়েছিল, সেটা নিরসন হয়নি৷ উল্টো কাজ হারিয়ে শ্রমিকেরা বেকার হয়ে যাচ্ছেন৷ শ্রমিকদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না৷ শ্রমিকেরা যে কাতারে ছিলেন সেই কাতারেই রয়ে গেছেন৷ যারা বেকার হয়েছেন তাদের সংসার কোনভাবেই চলছে না৷ নতুন কিছু গার্মেন্টস হলেও সেখানে তো সবার কর্মসংস্থান হচ্ছে না৷''




Comments