দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জাল নিবন্ধনের খবর প্রকাশ হয়েছে। এখানেও জালের মূল হোতা একজন সিস্টেম অ্যানালিস্ট, একজন ড্রাইভারসহ অফিসের ছোট-খাটো কর্মচারী। আর বড় কর্মকর্তারা এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না।
বর্তমানে প্রশ্ন ফাঁস থেকে বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে এমন সব শব্দ গণমাধ্যমে ঘুরে ফিরে আসছে। সহসাই প্রশ্ন জাগে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সঙ্গে ড্রাইভার, পিওনরা কিভাবে যুক্ত হয়? অফিস কর্মকর্তারা এসব একদম জানেন না? এমন গলদ যতগুলো প্রতিষ্ঠানের সেগুলোকে চিহ্নিত করা দরকার। দেশে বর্তমানে এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৩৪ হাজার। এর মধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২০ হাজার ৩১৬টি, কলেজ দুই হাজার ৬৬৪টি, মাদ্রাসা ৯ হাজার ২৯২টি এবং দুই হাজারের মতো কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য ২০০৫ সাল থেকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক ‘শিক্ষক নিবন্ধন সনদ’ বাধ্যতামূলক করা হয়। বতর্মানে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন প্রায় চার লাখ শিক্ষক ও এক লাখ কর্মচারী, যারা সরকারি বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন।
সম্প্রতি পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জাল সনদ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়। সেখানে এমন এক হাজার ১৫৬ জন শিক্ষকের জাল সনদের তথ্য দেয়া হয়। এর মধ্যে ৭৯৩ জন শিক্ষকের শিক্ষক নিবন্ধন সনদ, ২৯৬ জনের কম্পিউটার শিক্ষার সনদ এবং ৬৭ জনের বিএড, গ্রন্থাগার, সাচিবিকবিদ্যা ও অন্যান্য বিষয়ের সনদ জাল। ডিআইএর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ১৮ মে জাল সনদধারী ৬৭৮ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের চিঠি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরে পাঠায়। সেই চিঠিতে শিক্ষকদের এমপিও বন্ধ করা ও বিভাগীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া জাল সনদধারী শিক্ষকদের অবৈধভাবে গ্রহণ করা বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগারে ফেরত প্রদানেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একসময় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে পরিচালনা কমিটির একচ্ছত্র ক্ষমতা ছিল। ২০১৫ সাল পর্যন্ত তাদের হাতেই ছিল নিয়োগ কার্যক্রম। তারা বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে যে কাউকে নিয়োগ দিতে দ্বিধাবোধ করত না। আর এসব নিয়োগে অনেক শিক্ষকই জাল সনদ দিয়ে চাকরিতে ঢুকেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে জমা দেয়া অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, জাল সনদ কারবারের অন্যতম হোতা ছিলেন এনটিআরসিএর সিস্টেম অ্যানালিস্ট ওয়াসি উদ্দিন রাসেল ড্রাইভার মো. জিয়াউর রহমানকে নিয়ে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে তারা হাজার হাজার লোককে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিয়েছেন।
আমাদের যে জনবল, তাতে বছরে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা যায় না। তাতেই যদি এত শিক্ষকের সনদ জাল পাওয়া যায়, তাহলে সব শিক্ষকের সনদ যাচাই করলে জাল সনদধারী শিক্ষকের সংখ্যা ৩০ হাজারের কম হবে না। এনটিআরসিএর শিক্ষক নিবন্ধন সনদ বাণিজ্যের অন্যতম হোতা জিয়াউর রহমান বিপুল অর্থসম্পদের মালিক। নিজে ড্রাইভার হলেও তার রয়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট আরো কত কী! আমাদের মাথায় একটা বিষয় আসে না, শিক্ষালয়ের মতো একটা স্থানেও যদি নিবন্ধ জাল হয়, তাহলে শিক্ষকদের মান, শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অজান্তেই এতবড় ঘটনা ঘটেছে? এ কথা বিশ্বাস যোগ্য? আমরা মনে করি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যেহেতু জাল সনদ চিহ্নিত হওয়া শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে, তাই যারা জাল সনদ নিয়েছেন, তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি।
মানবকণ্ঠ/এসআরএস
Comments