
হলিউডে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে তৈরি এক ‘অভিনেত্রী’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে নিয়মিত পোস্ট করা ‘টিলি নরউড’ নামের চরিত্রটি নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা, ক্ষুব্ধ হয়েছেন হলিউডের খ্যাতিমান তারকারাও। মানুষের তৈরি কাজ চুরি ও ভবিষ্যতে অভিনেতাদের প্রতিস্থাপনের আশঙ্কায় সমালোচনার মুখে পড়েছে এটি।
এই চরিত্রের স্রষ্টা এলিন ভ্যান ডার ফেলডেন। তিনি এআই স্টার্টআপ ‘পার্টিকেল ৬’-এর প্রতিষ্ঠাতা। এই প্রতিষ্ঠান মূলত ফিল্ম ও টেলিভিশনের জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করে।
টিলি কে
চকচকে ত্বক আর ঢেউখেলানো বাদামি চুলের অধিকারী টিলি নরউড দেখতে যেন জেনারেশন-জেড প্রজন্মের ইনফ্লুয়েন্সার। গত ফেব্রুয়ারি থেকে নিয়মিতভাবে অভিনেত্রী হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার কথা জানিয়ে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে আসছে টিলি। কখনো ‘স্ক্রিন টেস্ট’-এর অভিজ্ঞতা, কখনো আবার নিজের ‘অভিনয় দক্ষতা’ নিয়ে গর্ব। তবে সে কোনো বাস্তব মানুষ নয়, বরং একজন এআই চরিত্র।
এক পোস্টে টিলি লেখে, ‘২০ সেকেন্ডে আমি দানবদের সঙ্গে লড়েছি, বিস্ফোরণ থেকে পালিয়েছি, আপনাকে গাড়ি বিক্রি করেছি এবং প্রায় অস্কার জিতেই ফেলেছিলাম। সব এক দিনেই... ঠিক তাই! এমন একজন অভিনেত্রী খুঁজে বের করুন, যিনি সবকিছুই পারেন।’ এই পোস্টের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল ‘AIActress’ হ্যাশট্যাগ।
টিলিকে নিয়ে বিশ্ববিখ্যাত হলিউড সংবাদমাধ্যম ডেডলাইনের এক প্রতিবেদন প্রকাশের পর অনেক অভিনেতা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। সেখানে বলা হয়, কিছু প্রতিভা খোঁজার এজেন্সি টিলিকে অভিনেত্রী হিসেবে সাইন করতে চায় এবং কিছু স্টুডিও নীরবে এআই কনটেন্টকে গ্রহণ করছে।
এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে জনপ্রিয় সিরিজ ‘গেম অব থ্রোনস’–এর অভিনেত্রী সোফি টার্নার বলেন, ‘ওয়াও...ধন্যবাদ, দরকার নেই।’
এক পোস্টে ‘শেমলেস’ ও ‘আমেরিকান হরর স্টোরি’খ্যাত ক্যামেরন কাউপারথওয়েট লেখেন, ‘এটা চরমভাবে অবিবেচনাপ্রসূত এবং সত্যি বলতে বিরক্তিকর। আমি আশা করি, এটা সব দিক থেকে খারাপ ফল দেবে—মানবিকভাবে ও অমানবিকভাবেও।’
সমালোচনার জবাবে টিলি ও নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে এক বিবৃতি দেন এলিন ভ্যান ডার ফেলডেন। তিনি লেখেন, ‘টিলি নরউড একজন মানুষকে প্রতিস্থাপন করার জন্য তৈরি হয়নি। সে একটি সৃজনশীল কাজ—একটি শিল্পকর্ম। যেমন অ্যানিমেশন, পাপেট্রি বা সিজিআই অভিনয়ের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছিল, তেমনি এআইও নতুনভাবে গল্প বলার একটি মাধ্যম হতে পারে।’
এলিন আরও বলেন, এআই চরিত্রদের একটি ভিন্ন ঘরানার শিল্প হিসেবে বিবেচনা করা উচিত, মানব অভিনেতাদের সঙ্গে তুলনা না করে।
হলিউডের অনেক অভিনেতা, পরিচালক ও লেখক বলছেন, টিলি নরউডের মতো এআই চরিত্রগুলোর পেছনে যেসব তথ্যভান্ডার ব্যবহার করা হয়, তা মানবশিল্পীদের কাজ থেকে নেওয়া। অথচ এ জন্য তাদের কোনো সম্মতি নেওয়া বা পারিশ্রমিক দেওয়া হয়নি।
‘মাতিলদা’ ও ‘মিসেস ডাউটফায়ার’-এর বিখ্যাত অভিনেত্রী মারা উইলসন টিলির একটি পোস্টে মন্তব্য করে লেখেন, ‘তুমি এটা তৈরি করোনি। শত শত বাস্তব কর্মী—আলোকচিত্রী, ক্যামেরাম্যান, এমনকি কৃষকেরাও শ্রম দিয়েছেন এই কাজের পেছনে। তুমি তাদের কাজ নিয়ে নিজের বলে চালিয়ে দিচ্ছ।’
এর আগে ২০২৩ সালে লেখক ও অভিনেতাদের যে ধর্মঘট হয়েছিল, তার অন্যতম মূল ইস্যু ছিল এআই। ধর্মঘটের পর চুক্তিতে বড় বড় স্টুডিও ও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো এআই ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সুরক্ষা দিতে রাজি হয়।
তবে এগুলো থামাতে পারছে না অন্যদের। এআই টুল এখনো এমন ভিডিও বা চরিত্র বানাচ্ছে, যা বাস্তব অভিনেতা বা পুরোনো সিনেমার দৃশ্যের সঙ্গে মিলে যায়।
এই পরিস্থিতিতে মিডিয়া জায়ান্টদের আইনি লড়াই শুরু হয়েছে। ডিজনি ও ইউনিভার্সাল মিডজার্নি নামের এআইভিত্তিক ভিডিও জেনারেটরের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলার অভিযোগ হলো, তাদের ছবি ও চরিত্র অবৈধভাবে ব্যবহার করে এআই মডেলকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ওয়ার্নার ব্রোসও একই ধরনের মামলা করেছে।
এদিকে সম্প্রতি ওপেনএআই জানিয়েছে, তাদের নতুন এআই ভিডিও টুল ‘সোরা’তে যদি কেউ চায়, তাহলে তাদের কনটেন্ট বা চেহারা ব্যবহার না করার জন্য ‘অপ্ট-আউট’ করার সুযোগ থাকবে।
Comments