
গ্যাস চুরির অভিযোগে ঢাকাই ছবির নায়ক, প্রযোজক অন্তত জলিলের সাভারের কারখানার গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি। অনন্ত জলিলের বিরুদ্ধে ‘গ্যাস বিল বকেয়া এবং গ্যাস মিটার টেম্পারিং’করার মাধ্যমে গ্যাস চুরির অভিযোগ এনেছে সংস্থাটি।
গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও টেম্পারিং করা মিটার জব্দ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন সরকারি কর্মকর্তারা। এক পর্যায়ে শ্রমিকদের ব্যবহার করে অভিযানকারী দলকে ঘেরাও করে অবরুদ্ধ রাখা হয়। পরে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পুলিশ নিয়ে অবরুদ্ধ দলকে উদ্ধার করেন।
গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসির ভিজিল্যান্স টিমের ব্যবস্থাপক আব্দুল আলীম রাসেল।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে এজেআই গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্টিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অন্তত জলিল বলেন, ‘আমি ফ্যাক্টরি চালাতে না পেরে জুয়েল নামের একজনকে ভাড়া দিয়েছিলাম। সে গ্যাস বিল বকেয়া রেখে এবং মিটার টেম্পারিং করে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।’
এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে এই শিল্পোদ্যক্তা বলেন, ‘আমি একজন সেলিব্রেটি। এসব নিউজ প্রকাশিত হলে আমার ইমেজ সংকট হবে।’
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আর্থিক টানাপোড়েন ও শ্রমিক অসন্তোষের কবলে পড়ে সাভারের হেমায়েতপুরে থাকা চিত্রনায়ক অনন্ত জলিলের মালিকানাধীন এজেআই গ্রুপ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। এই গ্রুপের তৈরি পোশাক কারখানা বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল হলেও টেক্সটাইল চলতো গ্যাসে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসির সাভার আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে তিনটি সংযোগ রয়েছে। এর মধ্যে দু্টি সংযোগের (সংকেত নম্বর-৩৩৮০০০৪০৪ ও 8৩৮০০০৪০৪) বিপরীতে বকেয়া বিল রয়েছে ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আমরা বকেয়া বিল আদায় করতে গিয়ে দেখি গ্যাস চুরি হচ্ছে। মিটার টেম্পারিং করা অবৈধ, বিপজ্জনক ও আইনত দণ্ডনীয়।’
সূত্র মতে, গত ১৫ অক্টোবর ওই টেম্পারিং করা মিটারটি খুলে আনতে গেলে সংশ্লিষ্টদের বাধা দেওয়া হয়। গত ১৯ অক্টোবর দলটি পুনরায় সেখানে অভিযান চালায়। এসময় দুটি মিটারেই টেম্পারিং করে গ্যাস চুরির আলামত পান ভিজিল্যান্স টিমের সদস্যরা।
সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মিটার দুটি খুলে আনতে গেলে ঘেরাও করা হয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসির গাজীপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভিজিল্যান্স টিমের ব্যবস্থাপক আব্দুল আলীম রাসেল ও তার সহকারীদের। ‘মব’তৈরির মাধ্যমে শ্রমিকদের দিয়ে ঘেরাও করা হয় হেমায়েতপুর-সিঙ্গাইর সড়ক। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসির একটি সূত্র বলছে, সংস্থার অপর সংযোগটি অন্তত জলিল ও তার স্ত্রী চিত্রনায়িকা আফিয়া নুসরাত বর্ষার মালিকাধীন এবি গ্রুপের নামে। চাইনিজ একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেওয়া এই প্রতিষ্ঠানের গ্যাস বিলই একমাত্র নিয়মিত।
সূত্র মতে, বাংলাদেশ গ্যাস আইন, ২০১০ অনুযায়ী, মিটার টেম্পারিং বা অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে গ্যাস ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশনের অধীনে থাকা সাভারের বিভিন্ন শিল্প কারখানায় মিটার টেম্পারিং এবং অবৈধ সংযোগের মতো দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে।
এজেআই গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্টিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অন্তত জলিল আরও বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই আমার কারখানা নাজুক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। দীর্ঘদিন শ্রমিকদের বেতন ভাতা চালিয়ে এলেও বর্তমানে কারখানা চালানোর মতো টাকা আমার হাতে নেই। মাসে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা লাভ দেবে এমন শর্তে ৫ বছর মেয়াদে চলতি বছরের ১ মে মো. জুয়েল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে পলো কম্পোজিট নিট ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের ডাইং এর সকল সেকশন, স্টোর, ব্যাচ, ফিনিশিং, ডাইচ-কেমিক্যাল স্টোর ইজারা অর্থাৎ ভাড়া দিয়েছি।
জুয়েল সিরাজগঞ্জের উল্লাপড়া থানার মাটিকোড়া গ্রামের আল মাহমুদের ছেলে। বেশ কিছুদিন তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমাকে পাওনা টাকা দেননি। বরং তিতাসের গ্যাস বিল বকেয়া রেখে উল্টো গ্যাস চুরির মাধ্যমে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এতে আমার কোন দায় নেই। এই দায় তাকেই নিতে হবে।’
এসময় এই সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে অনন্ত জলিল বলেন, ‘এসব নিউজ দিয়েন না। মানুষ আমাকে সেলেব্রেটি হিসেবে চেনে। এসব খবর আমার ভাবমূর্তির জন্যে ক্ষতিকর। আমি ওই প্রতারকের (জুয়েল ইসলাম) বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মামলা দিয়েছি।’
Comments