Image description

সময়টা ২০২২ সাল। হঠাৎ করেই সংগীতশিল্পী সিঁথি সাহা জানতে পারেন, তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছে ক্যান্সার। মুহূর্তেই যেন ভেঙে পড়ে চারপাশ। সেই সময় তিনি ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। অদম্য মানসিক শক্তি আর সবার আশীর্বাদ নিয়ে শুরু হয় তার লড়াই। অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই দিয়েছেন সন্তান জন্ম।

অপারেশন, কেমোথেরাপি, চুল পড়া, শারীরিক যন্ত্রণা। সবকিছুর মাঝেও তিনি ধরে রেখেছিলেন একটাই বিশ্বাস। আলো একদিন ফিরে আসবেই। আজ সেই আলোয় উদ্ভাসিত সিঁথি পুরোপুরি সুস্থ। একসময় যন্ত্রণার গভীরে থাকা এই শিল্পী এখন অন্যদের জন্য হয়ে উঠছেন অনুপ্রেরণার প্রতীক।

এই অনুপ্রেরণাই তাঁকে নিয়ে এসেছে নতুন এক যাত্রায়। ‘দ্য হিলিং রুম’ নামের পডকাস্টে। এখানে সিঁথি শুনবেন তাদের গল্প, যারা তাঁর মতোই জীবনের দুঃসহ অধ্যায় পেরিয়ে জয়ী হয়েছেন। যারা শোক, রোগ, ভাঙন বা হারানোর ব্যথা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছেন নবজীবনের আশায়।

এক আবেগঘন ভিডিও বার্তায় সিঁথি বলেন, ‘আমরা অনেকেই প্রিয়জনকে হারিয়ে, সম্পর্কের ভাঙনে কিংবা আমার মতো ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বাঁচার আশাটা হারিয়ে ফেলি। কিন্তু আমি শিখেছি, মানুষ একবার ভাঙলে, আবারও জোড়া লাগে। সেই জোড়া লাগা মানুষটা আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসে। আমি চাই, সেই জয়ীদের গল্পগুলো সবাই শুনুক।’

এর আগে চলতি বছরের শুরুতে সমকালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্যান্সার নিয়ে কথা বলেন সিঁথি। তিনি বলেন, ‘সবার সাপোর্ট এবং আমার মনোবল আমাকে সার্ভাইব করিয়েছে। ক্যান্সারের কথা শুনলেই আমরা অর্ধেক অসুস্থ হয়ে যাই, যা আমার কখনোই হয়নি। বাবা-মাকে না জানিয়ে আমি একা সিঙ্গাপুর গেছি। চিকিৎসা করিয়ে আবার ফিরে এসেছি। সার্জারির দিন শুধু আমার সঙ্গে আমার ছোট ভাই ছিল। মিউজিক ও মনোবল আমার শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।’

শরীরে ক্যান্সার নিয়ে সন্তান জন্ম দিয়েছেন এই শিল্পী। তিনি বলেন, ‘এটা আমার জন্য ভীষণ ঝুঁকি ছিল, আমি মেনে নিয়েই সেটা সাদরে গ্রহণ করেছি। সেই সঙ্গে সৃষ্টিকর্তা আমাকে ভীষণভাবে সাহায্য করেছেন।’

সিঁথির কথায়, ‘মূলত আমার ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়েছিল। ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে আমারা দেখি শতকরা তিন/চার শতাংশ নারীদের এই ক্যান্সার হয়। আমার পরিবারের কারো ক্যান্সার ছিল না। আমার পরের প্রজন্মের কি হবে আমি সেটা জানি না। দেশের বাইরে যারা থাকেন তিন-চার বছর পর পর একটা করে টেস্ট করা হয়। তারা সেটা করে নিতে পারেন। আর এটা আমাদের দেশেও আসার কথা। সেটা আসলে আরও ভালো হবে। তবে ক্যান্সার নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তৃতীয় কিংবা চতুর্থ স্টেজ থেকেও মানুষ কামব্যাক করছে এবং আমার মত হাসিখুশিভাবে বেঁচে আছে।’

এবার ‘দ্য হিলিং রুম’ নামের পডকাস্টে সেই গল্প পুরোপুরি শোনাবেন তিনি। শিগগিরই ভাইব নিউজ নামের ইউটিউব চ্যানেলে দেখা যাবে ‘দ্য হিলিং রুম’।

এই আয়োজন নিয়ে সিঁথি বলেন, ‘আমার কাছে প্রতিটি নতুন সকাল মানে নতুন জীবন, নতুন অনুপ্রেরণা। প্রায় দুই মাস আগে আমরা এই পডকাস্টের ঘোষণা দিয়েছিলাম একটাই বিশ্বাস নিয়ে। আপনার গল্পই হতে পারে অন্য কারও বাঁচার কারণ। এই দুই মাসে আমরা দেখেছি, মানুষ ভাঙে, কিন্তু ভাঙা মানুষই আবার সবচেয়ে উঁচুতে দাঁড়ায়। সেই মানুষদের গল্প নিয়েই আমরা আসছি। জীবনের জয়গাথা শোনাতে, সাহস জোগাতে।’ ‘দ্য হিলিং রুম’ শুধু একটি পডকাস্ট নয়। এটি পুনর্জন্মের গল্প, হার না মানা মানুষের গান।