Image description

পারিবারিক ব্যবসায় অংশীদার করার কথা বলে ২৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও হুমকির অভিযোগে দায়ের করা মামলাকে 'সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন' বলে দাবি করেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। সম্প্রতি এই মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল এবং রোববার তিনি জামিন লাভ করেন। এই ঘটনার পর সোমবার সকালে মেহজাবীন তার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে একটি দীর্ঘ বিবৃতি দিয়ে অভিযোগগুলোর বিস্তারিত খণ্ডন করেছেন।

মামলার প্রেক্ষাপট: আমিরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি গত মার্চ ২০২৫ সালে মেহজাবীন ও তার ভাই আলিসান চৌধুরীর বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেন। আদালতে হাজির না হওয়ায় গত ১০ নভেম্বর তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। এরপর রোববার সন্ধ্যায় তারা ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।

মেহজাবীনের আত্মপক্ষ সমর্থন: মেহজাবীন তার বিবৃতিতে জানান, এই মামলা সম্পর্কে তিনি গত ৯ মাস ধরে কিছুই জানতেন না। এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন যে, অভিযোগকারী পুলিশ বা আদালতকে তার সঠিক ফোন নম্বর বা ঠিকানা দেননি। তিনি তার বিরুদ্ধে ওঠা প্রতিটি অভিযোগ সুনির্দিষ্টভাবে খণ্ডন করেছেন।

আর্থিক লেনদেনের প্রমাণহীনতা: মেহজাবীন অভিযোগ করেন যে, অভিযোগকারী আর্থিক লেনদেনের কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। তিনি বলেন, "অভিযোগকারী দাবি করেন ২০১৬ সাল থেকে আমার সাথে 'ব্যবসা' করছিলেন। কিন্তু তিনি একটি মেসেজ, হোয়াটসঅ্যাপ বা আমার নম্বরে পাঠানো উত্তর, এমনকি একটি স্ক্রিনশটও দেখাতে পারেননি।"

২৭ লক্ষ টাকা দেওয়ার দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "তিনি (অভিযোগকারী) ২৭ লক্ষ টাকা দেওয়ার দাবি করলেও কোনো ব্যাংক লেনদেন, চেক, বিকাশ লেনদেন, লিখিত চুক্তি, রশিদ বা কোনো সাক্ষীর প্রমাণ দেখাতে পারেননি। একটি কাগজপত্রও নেই।"

হাতিরঝিলে ডেকে আনার ঘটনা: মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয় যে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি মেহজাবীন ও তার ভাই বাদীকে হাতিরঝিলের একটি রেস্টুরেন্টে ডেকে নিয়ে হুমকি দেন। এই অভিযোগকে 'সম্পূর্ণ প্রমাণহীন' উল্লেখ করে মেহজাবীন বলেন, "অভিযোগকারী দাবি অনুসারে, ১১ ফেব্রুয়ারি আমি তাকে চোখ বেঁধে হাতিরঝিলের একটি রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়েছিলাম... গত নয় মাসে তিনি রেস্টুরেন্ট বা রাস্তার এক সেকেন্ডেরও সিসিটিভি ফুটেজ বা কোনো সাক্ষী দেখাতে পারেননি। হাতিরঝিল ঢাকার সবচেয়ে বেশি সিসিটিভি-নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোর একটি।"

আইনি নোটিশ না পাওয়া: গত নয় মাসে কোনো আইনি নোটিশ পাননি বলেও মেহজাবীন স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, "কোনো পুলিশ স্টেশনের ফোন কল বা কোনো কোর্টের নোটিশ বা ডকুমেন্ট পাইনি। একটি নোটিশ পেলেও আমি অনেক আগে থেকেই আইনি ব্যবস্থা নিতাম।"

মেহজাবীন আরও জানান, মামলার কোনো ভিত্তি না থাকলেও, গ্রেপ্তারি পরোয়ানর খবর পেয়েই তিনি দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আইনি প্রক্রিয়া মেনে জামিন নিয়েছেন।

মিডিয়া ট্রায়াল থেকে বিরত থাকার অনুরোধ: 'মিডিয়া ট্রায়াল' না করার অনুরোধ জানিয়ে মেহজাবীন বলেন, "প্রমাণ ছাড়া দায়ের করা মামলা কখনো সত্য হয়ে যায় না। সত্য খুব দ্রুতই আদালতে পরিষ্কার হয়ে যাবে।" তিনি আরও উল্লেখ করেন, "এখনকার দিনে কাউকে অপমান করা, মানহানি করা বা ভাইরাল হওয়ার জন্য অন্যকে ব্যবহার করা খুবই সহজ হয়ে গেছে। এই ব্যক্তির যেই উদ্দেশ্যই থাকুক, আমার বা আমার পরিবারের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করে সে যা-ই করতে চায়- আমি বিশ্বাস করি সবকিছু খুব দ্রুতই পরিষ্কার হয়ে যাবে।"

মেহজাবীন জানান, খবরটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকে অভিযোগকারী ও তার আইনজীবীর ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ১৫ বছরের কর্মজীবনের পরিশ্রমের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "এই পরিশ্রমের পরেও আজ আমাকে এসব ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে- এটাই সবচেয়ে দুঃখজনক।"