বাংলার আকাশে এখন ঋতুর পালাবদলের মৃদু ছোঁয়া। আশ্বিন পেরিয়ে এখন কার্তিকের মাঝামাঝি ক্যালেন্ডারে আজ কার্তিক ১১, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ। গ্রীষ্মের উত্তাপ আর বর্ষার স্যাঁতস্যাঁতে ভাব মুছে গিয়ে প্রকৃতি এখন গাইছে হেমন্তের আগমনী সুর।
ভোরের মাঠে নেমে আসে কুয়াশার সাদা চাদর। ধানক্ষেতের শীষে জমে থাকে শিশিরবিন্দু, যেন প্রকৃতির চোখে ছোট্ট মুক্তো। কাশফুলের ঢেউ হেলে দুলে হাসে হিমেল হাওয়ার ছোঁয়ায়। সূর্যের প্রথম রশ্মিও যেন একটু লজ্জায় পড়ে, কুয়াশার পর্দা সরিয়ে পৃথিবীতে নামতে সময় নেয়। বাতাসে ভেসে আসে পাকা ধানের গন্ধ, আর মন বলে ওঠে শীত আসছে, খুব কাছেই!
গ্রামের উঠোনে এখন ভোরবেলা চায়ের ধোঁয়া ওঠে, খেজুর গাছে বাঁধা হয় রসের হাড়ি। দাদারা আগুন পোহান, পাশে বসে ছোটরা গল্পে মাতে। শহরের মানুষও টের পাচ্ছে ঋতুর এই নরম রূপান্তর কেউ গায়ে জড়িয়ে নিচ্ছে পাতলা চাদর, কেউ আবার শিশিরভেজা রাস্তায় হাঁটছে মিষ্টি নিঃশ্বাসে।
প্রকৃতি যেন ব্যস্ত নিজের সাজে। বরই গাছে ফুটেছে ছোট ছোট ফুল, মৌমাছিরা ছুটছে মধু সংগ্রহে। তাদের ডানার মৃদু শব্দে ভরে উঠছে সকালবেলা। বিশেষজ্ঞদের মতে, বরই ফুলের মধু শীতকালে রোগ প্রতিরোধে এক আশীর্বাদ সর্দি-কাশির হাত থেকে রক্ষা করে শরীরকে রাখে উষ্ণ। তাই মৌচাষির ঘরে এখন কাজের ব্যস্ততা, যেমন প্রকৃতিতেও প্রাণের সঞ্চার।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই চিরন্তন পঙ্ক্তির মতো-
শিশিরে ভিজিল বকুল-ডালে, জাগে শীতল হাওয়া,
শিউলির গন্ধে ভোরের আকাশ মুগ্ধ করে গাওয়া।
ঠিক তেমনই, বাংলার প্রতিটি গ্রাম আজ যেন সেই কবিতার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। কুয়াশায় মোড়া প্রভাত, শিউলির গন্ধ, আর হালকা শীতল হাওয়া সব মিলিয়ে প্রকৃতি গাইছে নতুন এক সুরের গান।
বাঙালির জীবনে শীত মানে শুধু আবহাওয়ার বদল নয় এটি এক উৎসবের ঋতু। পিঠা-পুলি, খেজুরের রস, তাজা সবজি, অতিথি পাখির কূজন সব মিলিয়ে শীত বাঙালির প্রাণে জাগিয়ে তোলে আনন্দের তরঙ্গ।
আশ্বিন-কার্তিকের এই সন্ধিক্ষণে বাংলার প্রকৃতি যেন দাঁড়িয়ে আছে নতুন এক দিনের দোরগোড়ায়। ভোরের কুয়াশা, হেমন্তের হাওয়া, ধানের সুবাস আর মানুষের মুখে শান্তির হাসি সব মিলিয়ে শীতের আগমন বাঙালির হৃদয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে এক স্নিগ্ধ আবেগের পরশে।




Comments