রাজশাহীর চারঘাটে আম বাগান কেটে অন্য ফসলে ঝুকছেন কৃষকরা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কেটে ফেলা হচ্ছে বড় বড় আম বাগান। কয়েক বছর ধরে এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বেশি। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমগাছ কেটে অন্য ফসল চাষ করা হচ্ছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বাগান মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে আম গাছ কেটে ফেলছেন। আবার বাজারে আমের মূল্যও কম। বাইরে থেকে এলাকায় আগের মতো বেপারিরা আম কিনতে আসেন না। আবার কোনো কোনো বছর লোকসানও গুণেছেন। তাই আম গাছ কেটে অন্য ফসল করছেন বলে জানান তারা।
স্থানীয় আমচাষিরা জানিয়েছেন, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় পরিচর্যা খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে আমের দাম দিন দিন কমেছে। ১৪ থেকে ১৫ বছর আগে যে আম ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে, সেই আম গত কয়েক বছর ধরে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়। তাই সমপরিমাণ জমিতে আম বাগানের চেয়ে অন্য ফসল চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
সরদহ ইউনিয়নের ঝিকরা গ্রামের আম চাষি শাহিন জোয়ার্দার বলেন, আগের মতো গাছ লাগিয়ে রাখলেই আর আম হচ্ছে না। ব্যাপক পরিচর্যা করতে হয়। পরিচর্যার ব্যয়ও বেড়ে গেছে। সেই অনুপাতে আমের দাম বাড়ছে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দাম আরও কমছে। তার বিপরীতে অন্য ফসলের দাম বাড়ছে। তাই আম ছাড়া এখন অন্য ফসলে লাভ বেশি। এ জন্য অনেকে পুরোনো বাগান কেটে নতুন করে বাণিজ্যিকভাবে সম্ভাবনাময় গাছ লাগাচ্ছেন। প্রতিদিন চারঘাটে কোথাও না কোথাও আমগাছ কাটার ঘটনা ঘটছে।
মুংলী গ্রামের আম চাষি আজিম উদ্দিন বলেন, আম বাগানের জমিতে এবার তিনি সবজি চাষ করবেন। জমির পরিমাণ প্রায় ১ বিঘা। সবজি চাষ করলে ২০ হাজার টাকা আয় হবে। তাই আম গাছ পুষে কোনো লাভ নেই।
ভায়ালক্ষীপুর ইউনিয়নের পুঠিমারি গ্রামের মাসুদ রানা বলেন, আমার ১০ কাঠা জমিতে আম বাগান ছিল। সেখানে একটি গাছ রেখে এখন সরিষার আবাদ করবো। তিনি আরও বলেন, এবার বাগানে ৩ হাজার টাকার বেশি আম বিক্রি করতে পারেননি। গাছ কাটার পর সবজি চাষ করে ৩ মাসে ৭ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আল মামুন হাসান বলেন, চারঘাট উপজেলায় বর্তমানে ৪ হাজার ৯০৩ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এর মধ্যে ৫ হেক্টর আম গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। যারা আম বাগান কেটে ফেলছে তাদেরকে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি উন্নত জাতের আম গাছ লাগানোর জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।




Comments