Image description

সময়ের পালাবদলে বদলে যাচ্ছে কৃষির রূপ-রং। আধুনিক যন্ত্রপাতির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়তে বাড়তে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় হারিয়ে যাচ্ছে এক সময়ের গ্রামবাংলার ঐতিহ্য গরু দিয়ে ধান মাড়াই। এক যুগ আগেও স্থানীয় কৃষকের ঘরে খেতেই দেখা যেত ধান কাটা শেষে সন্ধ্যায় গরুর হালে ধান মাড়াইয়ের সেই পরিচিত দৃশ্য। কিন্তু কৃষিতে প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির কারণে এখন ধান রোপণ, কাটা, মাড়াই সবকিছুই নির্ভর করছে যান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর।

হেমন্তের আগমনে একসময় গ্রামবাংলার কৃষক পরিবারগুলো মেতে উঠতো ধান কাটার উৎসব ও নবান্নের আনন্দে। দিনে মাঠে ধান কাটার পরে সন্ধ্যায় পরিবার-পরিজন নিয়ে হালের গরু দিয়ে ধান মাড়াই ছিল এক ধরনের মিলনমেলা। শিশুদের হাসি, বড়দের ব্যস্ততা আর কৃষানের ঘাম-সব মিলিয়ে ছিল এক অপূর্ব চিত্র। কিন্তু আজ সেই দৃশ্য আর দেখা যায় না; ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিচ্ছে কৃষির এই নিজস্ব সংস্কৃতি।

দক্ষিণ বড়ডহর গ্রামের কৃষক বশির মিয়া  বলেন, আগে প্রতিটি গ্রামে রাতভর চলতো গরু দিয়ে ধান মাড়াইয়ের কাজ। গ্রামের নারী-পুরুষ সবাই মিলে কাজ করতাম। এখন আর সেই দিন নেই। সব কাজই যন্ত্র দিয়ে হচ্ছে।

বেলাগাঁও গ্রামের কৃষক ফারুক মিয়া জানান, আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার কাজের গতি কয়েকগুণ বাড়িয়েছে। এখন পাওয়ার টিলারের মাধ্যমে কয়েক ঘণ্টায় জমি প্রস্তুত হয়। সেচের জন্য পাম্প, বীজ ছিটানোর জন্য উন্নত যন্ত্র, পোকা দমনে আধুনিক কীটনাশক সব মিলিয়ে কৃষি এখন অনেক সহজ হয়েছে। ধান কাটার জন্যও আছে হারভেস্টার মেশিন।

জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল আলম খান  বলেন, প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে প্রাচীন পদ্ধতি বিলুপ্ত হওয়াই স্বাভাবিক। এখন কৃষকেরা অল্প সময়ে, কম খরচে, ঝুঁকিমুক্তভাবে ধান ঘরে তুলতে পারছেন। এতে উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে, কৃষকের আয় বাড়ছে, দেশের কৃষি অর্থনীতিও শক্তিশালী হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বিগত দিনে হাল-গরু দিয়ে চাষাবাদ ও ধান মাড়াই করতে সময় ও শ্রম ব্যয় বেশি ছিল। আধুনিক কৃষিযন্ত্রের ফলে সেই সীমাবদ্ধতা দূর হয়েছে। তবে কৃষির প্রাচীন ঐতিহ্যগুলোকে তথ্য-সংগ্রহ, প্রদর্শনী ও শিক্ষার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন।

আধুনিকতা যেমন কৃষিকে গতিশীল করে জুড়ীর অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত খুলে দিয়েছে, তেমনি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে গরু দিয়ে ধান মাড়াইয়ের মতো শত বছরের ঐতিহ্য। সময়ের চাহিদায় পরিবর্তন অনিবার্য হলেও গ্রামীণ সংস্কৃতির এমন মূল্যবান ইতিহাস যেন হারিয়ে না যায় এটাই সচেতন মহলের প্রত্যাশা।