শিক্ষিত বেকারত্ব যেখানে দেশের তরুণ সমাজের বড় চ্যালেঞ্জ, ঠিক সেই সময় ভিন্ন পথ বেছে নিয়ে সাফল্যের দৃষ্টান্ত গড়েছেন বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার দুই যুবক মতিউর রহমান (৩২) ও রুবেল হোসেন (২৫)। দীর্ঘদিন চাকরির চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর তারা কৃষিকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। আর সেই সিদ্ধান্ত থেকেই হাইব্রিড মরিচ চাষের মাধ্যমে বদলে গেছে জীবনের মোড়।
উপজেলার মাদলা ইউনিয়নের চকমোমিন গ্রামের আলহাজ আব্দুল কাদেরের ছেলে মতিউর রহমান। উচ্চ শিক্ষা শেষ করেও চাকরিতে কাঙ্ক্ষিত সুযোগ না পেয়ে তিনি পৈতৃক জমিতে কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেন। পাশাপাশি বাজারে কীটনাশকের ব্যবসাও শুরু করেন। চলতি মৌসুমে তিন বিঘা জমিতে সবজি আবাদ করেছেন। এক বিঘায় হাইব্রিড মরিচ, এক বিঘায় বেগুন ও অন্য এক বিঘায় ফুলকপি। নিয়মিত পরিচর্যা, সুষম সার প্রয়োগ এবং যথাযথ কীটনাশক ব্যবহারের ফলে সব ক্ষেতেই পেয়েছেন বাম্পার ফলন।
ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি তিনি ২০ শতকে কারিশমা এবং ১৩ শতকে কিংস্টার জাতের হাইব্রিড মরিচ রোপণ করেন। ইতোমধ্যে তিনি দেড় লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পুরো মৌসুমে এক বিঘা জমি থেকে আড়াই লাখ টাকার মরিচ বিক্রি সম্ভব বলে আশা করছেন মতিউর, যেখানে তার উৎপাদন ব্যয় মাত্র ৩০–৩৫ হাজার টাকা পড়বে।
অপরদিকে, একই গ্রামের আব্দুল খালেক মণ্ডলের ছেলে রুবেল হোসেনও স্নাতক শেষ করার পর তিন বছর চাকরির চেষ্টা চালিয়েও সফল হননি। পরে তিনি কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেন। ফুলকপি ও আলুর পাশাপাশি এ মৌসুমে ৫৮ শতক জমিতে কারিশমা ও ১৭১৭ জাতের হাইব্রিড মরিচ চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে তিনি দেড় লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করেছেন। বাজারদর স্থিতিশীল থাকলে মৌসুম শেষে তার মোট বিক্রির পরিমাণ প্রায় ৪ লাখ টাকায় পৌঁছাবে বলে আশা করছেন রুবেল, যেখানে পুরো উৎপাদন ব্যয় মাত্র ৬০–৭০ হাজার টাকা।
শাহনগর সবজি নার্সারি মালিক সমিতির সভাপতি আমজাদ হোসেন বলেন, হাইব্রিড মরিচ বর্তমানে কৃষকদের মধ্যে সবচেয়ে লাভজনক ফসলের মধ্যে একটি। উচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা, বাজারদর অনুকূল থাকা এবং সঠিক পরিচর্যার কারণে এই চাষ দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ তথ্যমতে , চলতি মৌসুমে শাজাহানপুরে প্রায় সাড়ে ৩শ’ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড মরিচ চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। উৎপাদন ভালো হওয়া এবং বাজারদর স্থিতিশীল থাকায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমেনা খাতুন বলেন, চাহিদা বাড়ায় কৃষকরা স্থানীয় জাতের পরিবর্তে এখন হাইব্রিড মরিচ চাষে ঝুঁকছেন। বেশি উৎপাদন হওয়ায় তাদের আয়ও বেড়ে যাচ্ছে।
শুধু মতিউর ও রুবেলই নয়, হাইব্রিড মরিচ চাষে আরও অনেকের ভাগ্য বদলেছে। এটি প্রমাণ করে যে সঠিক পরিকল্পনা, পরিশ্রম এবং প্রযুক্তিনির্ভর কৃষির মাধ্যমে নিজের কর্মসংস্থান তৈরি করে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করা সম্ভব।




Comments