Image description

বাজেট নিয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতাদের মধ্যে সমঝোতার অভাবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার শাটডাউনে চলে গেছে। এই রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে সরকারি কার্যক্রমের অর্থায়ন ব্যাহত হচ্ছে, যা অক্টোবর মাস এবং তার পরেও অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে দেশজুড়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারি কর্মচারীরা নানা ধরনের ভোগান্তির মুখে পড়তে পারেন।

জনজীবনে শাটডাউনের প্রভাব

শাটডাউনের ফলে বিমান ভ্রমণ থেকে শুরু করে জাতীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা পরিদর্শন পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। বিমানবন্দরে নিরাপত্তা চেকিংয়ের জন্য দীর্ঘ লাইন এবং ফ্লাইট বিলম্বের সম্ভাবনা রয়েছে। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল এবং পরিবহন নিরাপত্তা প্রশাসনের (টিএসএ) কর্মীরা বেতন না পাওয়ায় কাজে অনুপস্থিত থাকতে পারেন। এই কর্মীরা ‘অপরিহার্য’ হিসেবে বিবেচিত হলেও শাটডাউন শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা বেতন পাবেন না। ২০১৮-১৯ সালের শাটডাউনের সময়ও এ ধরনের কর্মীদের অনুপস্থিতির কারণে ফ্লাইট বিলম্বের ঘটনা ঘটেছিল।

বিদেশ ভ্রমণের পরিকল্পনাকারীরাও সমস্যার মুখে পড়তে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট সংস্থা জানিয়েছে, পাসপোর্ট প্রক্রিয়াকরণে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগতে পারে।

সরকারি কর্মচারীদের উপর প্রভাব

শাটডাউনের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের উপর। প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার কর্মী, অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রায় ৪০ শতাংশ কর্মী, অবৈতনিক ছুটিতে যেতে পারেন। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সীমান্ত সুরক্ষা সংস্থার সদস্যরা কাজ চালিয়ে যাবেন, তবে তারাও শাটডাউন চলাকালীন বেতন পাবেন না। ফলে অনেক কর্মী জীবিকার তাগিদে দ্বিতীয় চাকরি নিতে বাধ্য হতে পারেন, যেমনটি অতীতের শাটডাউনে দেখা গেছে।

সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, পররাষ্ট্র এবং নাসার মতো সরকারি বিভাগগুলোর কর্মীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অপরিহার্য নয় এমন কর্মীরা বাড়িতে থাকতে বাধ্য হবেন।

গবেষণা ও জাতীয় উদ্যানে প্রভাব

রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (এনআইএইচ)-এর মতো সংস্থাগুলোর কর্মী বরখাস্তের কারণে চলমান গবেষণা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া, ফেডারেল জমি, জাতীয় পার্ক এবং উদ্যানগুলো বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পূর্ববর্তী শাটডাউনে এসব স্থানে রেঞ্জার এবং অন্যান্য কর্মীদের অনুপস্থিতির কারণে ভাঙচুর, চুরি এবং পরিবেশের ক্ষতির ঘটনা ঘটেছিল। এবার পার্ককর্মী ও সংরক্ষণকর্মীরা এই স্থানগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন।

স্মিথসোনিয়ান ও চিড়িয়াখানা

স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনের জাদুঘরগুলো ৬ অক্টোবর পর্যন্ত খোলা থাকবে, কারণ প্রতিষ্ঠানটি পূর্ববর্তী বছরগুলোতে পর্যাপ্ত তহবিল সংগ্রহ করেছে। তবে স্মিথসোনিয়ান পরিচালিত চিড়িয়াখানার জনপ্রিয় লাইভ ওয়েবক্যাম সেবা বন্ধ থাকবে, ফলে দর্শনার্থীরা পান্ডা, হাতি বা সিংহের মতো প্রাণী অনলাইনে দেখতে পারবেন না। তবে চিড়িয়াখানার প্রাণীগুলো যথারীতি যত্ন পাবে।

সামাজিক সেবা ও দুর্যোগ ত্রাণ

মেডিকেয়ার এবং মেডিকেইড কার্যক্রম চালু থাকলেও কর্মী সংকটের কারণে সেবায় বিলম্ব হতে পারে। নারী ও শিশুদের জন্য খাদ্যসহায়তা ও পুষ্টি কর্মসূচি ‘ডব্লিউআইসি’ তহবিল সংকটে পড়তে পারে। বন্যাবিমা কর্মসূচি বন্ধ হলে বাড়ির মর্টগেজ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী শাটডাউনের ক্ষেত্রে ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (ফেমা)-এর দুর্যোগ ত্রাণ তহবিল ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ডাক বিভাগে কোনো প্রভাব নেই

শাটডাউনের প্রভাব পড়বে না যুক্তরাষ্ট্রের ডাক বিভাগে। ডাকঘর খোলা থাকবে এবং চিঠি যথারীতি বিলি হবে, কারণ এই বিভাগ কংগ্রেসের তহবিলের উপর নির্ভর করে না এবং নিজস্ব আয়ে পরিচালিত হয়।

রাজনৈতিক অচলাবস্থার সমাধান কবে?

বাজেট নিয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে এই শাটডাউন সৃষ্টি হয়েছে। আইনপ্রণেতারা কখন সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবেন, তা এখনও অনিশ্চিত। এই অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্রের জনজীবন এবং অর্থনীতিতে আরও ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে।