Image description

তীব্র অর্থসংকটের কারণে জাতিসংঘ (ইউএন) বিশ্বজুড়ে নয়টি শান্তিরক্ষা মিশন থেকে প্রায় এক-চতুর্থাংশ সেনা ও পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে। বুধবার (৮ অক্টোবর) একাধিক শীর্ষ জাতিসংঘ কর্মকর্তার বরাতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতিসংঘের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রায় ১৩ থেকে ১৪ হাজার শান্তিরক্ষী সদস্য প্রভাবিত হবেন। সামগ্রিকভাবে প্রায় ২৫ শতাংশ শান্তিরক্ষী সেনা ও পুলিশ, তাদের সরঞ্জামসহ নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। একই সঙ্গে বিপুলসংখ্যক বেসামরিক কর্মীকেও মিশন থেকে প্রত্যাহার করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বকেয়া ও অর্থায়ন বাতিল

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা তহবিলে সবচেয়ে বড় অবদান রাখে যুক্তরাষ্ট্র (প্রায় ২৬ শতাংশ) এবং দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন (প্রায় ২৪ শতাংশ)। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থপ্রদান বাধ্যতামূলক হলেও, দেশটি বর্তমানে গুরুতর বকেয়ায় রয়েছে।

একজন জাতিসংঘ কর্মকর্তা জানান, নতুন আর্থিক বছর শুরু হওয়ার আগেই (১ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের বকেয়া ছিল ১.৫ বিলিয়ন বা ১৫০ কোটি ডলার। এর সঙ্গে চলতি অর্থবছরের আরও ১.৩ বিলিয়ন বা ১৩০ কোটি ডলার যুক্ত হওয়ায় বর্তমানে মোট বকেয়া দাঁড়িয়েছে ২.৮ বিলিয়ন বা ২৮০ কোটি ডলারেরও বেশি।

যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘকে জানিয়েছে যে তারা শিগগিরই ৬৮ কোটি ডলার পরিশোধ করবে। তবে মার্কিন মিশন এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।

জাতিসংঘ কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত আগস্টে একতরফাভাবে ২০২৪ ও ২০২৫ সালের জন্য বরাদ্দকৃত ৮০০ মিলিয়ন বা ৮০ কোটি ডলার শান্তিরক্ষা তহবিল বাতিল করেন। হোয়াইট হাউজের বাজেট অফিস আরও প্রস্তাব দিয়েছে যে ২০২৬ সাল থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যুক্তরাষ্ট্রের সব অর্থায়নই বন্ধ করে দেওয়া হবে। এর যুক্তি হিসেবে মালি, লেবানন ও কঙ্গোতে মিশনের ব্যর্থতা উল্লেখ করা হয়েছে।

যেসব মিশনে প্রভাব পড়বে

অর্থসংকটের কারণে যেসব মিশনে সদস্যসংখ্যা কমানো হচ্ছে, সেগুলো হলো: দক্ষিণ সুদান, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, লেবানন, কসোভো, সাইপ্রাস, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, পশ্চিম সাহারা, ইসরায়েল-সিরিয়ার গোলান মালভূমির নিরস্ত্রীকৃত এলাকা এবং আবেয়ি (দক্ষিণ সুদান ও সুদানের যৌথ প্রশাসনিক অঞ্চল)।

জাতিসংঘের ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বছরেই এমন আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। সংস্থার মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এরই মধ্যে ব্যয় সাশ্রয় ও দক্ষতা বৃদ্ধির নতুন কৌশল নিয়ে কাজ করছেন।

গুতেরেসের ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, "এই সংকট কেবল একটি অস্থায়ী অর্থঘাটতি নয়—এটি জাতিসংঘের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম ও বৈশ্বিক শান্তিরক্ষার সক্ষমতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে।"