Image description

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএকে ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর অনুমতি দিয়েছেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই নিকোলাস মাদুরোর সরকার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। 

বুধবার (১৫ অক্টোবর) ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে ট্রাম্প বলেন, 'আমি দুটি কারণে সিআইএকে অনুমোদন দিয়েছি। প্রথমত, ভেনেজুয়েলা তাদের কারাগারগুলো খালি করে সব বন্দিকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে। দ্বিতীয় কারণ, মাদক। অনেক মাদক আসে ভেনেজুয়েলা থেকে, বিশেষ করে সমুদ্রপথে। এবার আমরা স্থলপথেও তা বন্ধ করবো।' ট্রাম্পের এই অনুমোদনের ফলে সিআইএ এখন ভেনিজুয়েলায় এককভাবে বা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে গোপন অভিযান চালানোর ক্ষমতা পেলো।

ট্রাম্পের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় বুধবার (১৫ অক্টোবর) রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট মাদুরো বলেন, 'না হবে কোনো সরকার পরিবর্তন, না হবে সিআইএ-নিয়ন্ত্রিত কোনো অভ্যুত্থান। আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া—এসব ব্যর্থ যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি আমরা চাই না। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে বলি—আমরা যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই।' এর আগে মাদুরো রাজধানী কারাকাসের পেতারে ও পার্শ্ববর্তী মিরান্দা রাজ্যে সামরিক মহড়ার নির্দেশ দেন। 

টেলিগ্রামে তিনি জানান, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বেসামরিক মিলিশিয়াকে তেলসমৃদ্ধ দেশটির প্রতিরক্ষায় প্রস্তুত করা হচ্ছে। ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে বলেন, 'আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের যুদ্ধবাজ ও উসকানিমূলক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। সিআইএ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে সামরিক মোতায়েন স্পষ্টতই আগ্রাসন, হুমকি ও হয়রানির নীতি।'

ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে এক বক্তব্যে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন ‘স্থলভাগেও নজর দিচ্ছে’, যাতে ওই অঞ্চলের মাদকচক্রের বিরুদ্ধে আরও অভিযান চালানো যায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরই মধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে আটটি যুদ্ধজাহাজ, একটি পারমাণবিকচালিত সাবমেরিন ও কয়েকটি যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছেন, যা মাদক পাচার দমনের অংশ বলে হোয়াইট হাউজের ভাষ্য। 

সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসে পাঠানো একটি গোপন নথিতে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, তারা এখন মাদকচক্রগুলোর সঙ্গে একটি অ-আন্তর্জাতিক সশস্ত্র সংঘাতের অবস্থায় রয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় সাগরে অন্তত পাঁচটি সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌযানে হামলা চালিয়েছে, যেখানে ২৭ জন নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘ-নিযুক্ত মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা এসব অভিযানের বর্ণনা দিয়েছেন ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে। 

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক অভিযানে মঙ্গলবার ভেনেজুয়েলার উপকূলে এক নৌকায় হামলায় ছয়জন নিহত হন। ট্রাম্প দাবি করেন, গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, নৌযানটি মাদক পাচারে জড়িত ছিল। যদিও মার্কিন কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট মাদকচক্রের নাম প্রকাশ করেননি বা নিহতদের পরিচয়ও জানাননি। 

মার্কিন কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, মাদুরো নিজেই ‘কার্টেল অব দ্য সানস’ নামের একটি সংগঠনের অংশ, যেখানে ভেনেজুয়েলার উচ্চপদস্থ সামরিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জড়িত, তবে মাদুরো এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।