নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে বিজয় ভাষণ দেওয়ার জন্য জোহরান মামদানি যখন মঞ্চে ওঠেন তখন স্থানীয় সময় প্রায় মধ্যরাত। ভাষণের একেবারে শেষ পর্যায়ে তিনি ধন্যবাদ জানান পরিবারের সদস্যদের। পাশে ছিলেন স্ত্রী রামা দুয়াজি।
এ সময় রামাকে উদ্দেশ্য করে জোহরান আরবি শব্দ ‘হায়াতি’ ব্যবহার করেন। যেটির অর্থ ‘আমার জীবন।’ তিনি বলেন, ‘রামা তুমি অসাধারণ। তোমাকে ছাড়া কোনো মুহূর্তই আমি ভাবতে পারি না।’
রামা দুয়াজিকে নিয়ে বুধবার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস ও দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট। এতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জোহরানের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি অনেকটা নিঃশব্দে পাশে থেকেছেন। যা স্মরণ করে ভাষণ দেওয়ার সময় রামাকে অসাধারণ এক শিল্পী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন জোহরান। বলেন, সে নিজের পরিচয়েই পরিচিত হওয়ার যোগ্য।
সিরীয়-আমেরিকান রামা দীর্ঘদিন ধরে তাঁর শিল্পকর্মের মাধ্যমে রাজনীতিতে সরব। মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন সমস্যা নিয়ে তিনি নিয়মিত কথা বলেছেন। ১৯৯৭ সালে টেক্সাসের হিউস্টনে জন্ম নেওয়া রামা ৯ বছর বয়সে পরিবারসহ দুবাইয়ে চলে যান। সেখানেই বড় হয়েছেন। ২০১৯ সালে ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটি থেকে যোগাযোগের ওপর স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০২১ সালে নিউ ইয়র্ক সিটিতে পাড়ি জমানোর পর থেকে শিল্পচর্চা শুরু করেন।
একই বছর ‘হিঞ্জ’ নামের একটি ডেটিং অ্যাপে জোহরানের সঙ্গে পরিচয় হয় রামার। জোহরান তখন স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য। সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পরিচয়ের মুহূর্ত নিয়ে তিনি কৌতুকও করেন। বলেন, এই পরিচয় খুব বেশি দিন আগের নয়। তাই বোঝাই যাচ্ছে, ডেটিং অ্যাপ আমার মতো অনেকের কাছেই এখনো আশার আলো হয়ে আছে।
গত বছর নিউ ইয়র্কের স্কুল অব ভিজ্যুয়াল আর্টস থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন রামা। একই বছরের অক্টোবরে জোহরানের সঙ্গে বাগদানের ঘোষণা দেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তারা বিয়ে করেন। বিয়ের আয়োজন করতে তারা উগান্ডায়ও গিয়েছিলেন।
স্কুল অব ভিজ্যুয়াল আর্টস থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করার পর রামার শিল্পজীবন দ্রুতই এগোতে থাকে। তাঁর ইলাস্ট্রেশন ছাপা হয়েছে দ্য নিউ ইয়র্কার, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট ও ভোগ-এর মতো নামকরা প্রকাশনায়। কাজ করেছেন অ্যাপল, স্পটিফাইসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। দুয়াজি মূলত ডিজিটাল মাধ্যমে কাজ করতে পছন্দ করেন। তবে হাতে তৈরি সিরামিক শিল্পেও তিনি দক্ষ। একসময় ইলাস্ট্রেশন ও অ্যানিমেশনের ওপর কর্মশালাও পরিচালনা করেছেন।
গত এপ্রিলে সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে রামা লেখেন, শিল্প স্বভাবতই রাজনৈতিক। বিশেষ করে এটি যেভাবে সৃষ্টি হয়, অর্থায়ন পায় ও মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে।
ব্রুকলিনের মঞ্চে বিজয়ী ভাষণ দেওয়ার সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন জোহরানের মা মিরা নায়ার ও বাবা মোহাম্মদ মামদানি। মায়ের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি ধন্যবাদ জানান নিউ ইয়র্কের ‘আন্টি’দেরও।




Comments