ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে ফাটল দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউক্রেনের সংঘাত একটি ‘সম্ভাব্যভাবে নির্ণায়ক পর্যায়ে’ প্রবেশ করেছে। শনিবার (৬ নভেম্বর) ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে এমনটা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ইউক্রেনের সংঘাত একটি সম্ভাব্য সিদ্ধান্তমূলক পর্যায়ে প্রবেশ করার পর, আপডেট করা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল বলছে, ইউরোপ তাদের সংস্কৃতি এবং নীতি পরিবর্তন না করলে ‘ধ্বংস হওয়ার ঝুঁকিতে’ রয়েছে।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুসারে, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে শান্তি চুক্তির মধ্যস্থতা করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা নিয়ে ইউরোপ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ইউরোপীয় নেতারা ওই চুক্তিকে পশ্চিমাদের ‘আত্মসমর্পণ’ হিসেবে বিবেচনা করছেন।
এর ফলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের ওপর পশ্চিমাদের আস্থা কমে গেছে। বর্তমানে ইউরোপীয় কূটনীতিকরা হোয়াইট হাউসের সঙ্গে ‘সম্পর্কের তীব্র অবনতি’ লক্ষ্য করছেন।
ব্লুমবার্গ উল্লেখ করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ ছাড়া ইউক্রেনের জন্য আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রাখাতে ইউরোপ একটি কার্যকর পরিকল্পনা তৈরি করতে পারবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
গত ৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের হালনাগাদ জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ইউরোপ নিয়ে একটি উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। ৩৩ পৃষ্ঠার এই কৌশলে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিশ্ব সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি’ তুলে ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য কীভাবে সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহার করা হবে, সে বিষয়গুলো উঠে এসেছ।
নথিতে সতর্ক করা হয়েছে, ইউরোপ ‘সভ্যতাগত বিলুপ্তির’ মুখোমুখি। আগামী ২০ বছরের মধ্যে ইউরোপের ‘সভ্যতাগতভাবে ধ্বংসের বাস্তব এবং আরও স্পষ্ট সম্ভাবনা’ রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় কিছু দেশ নির্ভরযোগ্য মিত্র হিসেবে থাকবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। কৌশলগত নথিতে ইউরোপ মহাদেশের ওপর বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।
নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউরোপের মুখোমুখি বৃহত্তর সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হলো, ইইউ এবং অন্যান্য বহুজাতিক সংস্থার কার্যকলাপ। এগুলো রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ণ করে। অভিবাসন নীতি মহাদেশটিতে সংঘাত সৃষ্টি করছে। বাকস্বাধীনতার ওপর সেন্সরশিপ ও রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন, জন্মহার হ্রাস ও জাতীয় পরিচয় এবং আত্মবিশ্বাস হ্রাস পেয়েছে।
পলিটিকো বলছে, নতুন নিরাপত্তা কৌশলটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয় ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ বা ‘MAGA’ আন্দোলনের অংশ। এটি ইউরোপের জাতীয়তাবাদী দলগুলোর মধ্যে একটি স্পষ্ট আদর্শিক যোগসূত্র তৈরি করে। মার্কিন প্রশাসন জার্মানি এবং স্পেনের মতো দেশগুলোতে ডানপন্থী দলগুলোর সঙ্গে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এটি ইঙ্গিত দেয়, ট্রাম্প প্রশাসন কেবল ‘আদর্শিকভাবে মিত্র’ ইউরোপীয় দলগুলোকে সাহায্য করতে পারে।




Comments