Image description

চীনের সাথে ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনার মধ্যেই নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ অঙ্কের প্রতিরক্ষা বাজেট অনুমোদন করেছে জাপান। শুক্রবার জাপানি মন্ত্রিসভা আগামী অর্থবছরের জন্য ৫৮ বিলিয়ন (৫ হাজার ৮০০ কোটি) ডলারের এই বিশাল বাজেট প্রস্তাব পাস করে, যা গত বছরের তুলনায় ৯.৪ শতাংশ বেশি।

জাপানের এই বিশাল ব্যয়ের প্রধান লক্ষ্য হলো ‘পাল্টা আঘাত’ বা কাউন্টার-স্ট্রাইক সক্ষমতা বাড়ানো। ৫ বছর মেয়াদী পরিকল্পনার চতুর্থ বছরে এসে টোকিও এখন জিডিপির ২ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পথে রয়েছে। নতুন এই বাজেটে ভূমি থেকে সমুদ্রে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এবং অত্যাধুনিক চালকহীন সমরাস্ত্র (ড্রোন) ক্রয়ের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সমুদ্র উপকূলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০২৮ সালের মার্চের মধ্যে ‘শিল্ড’ নামক একটি বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় ১০০ বিলিয়ন ইয়েন ব্যয়ে নজরদারি ও প্রতিরক্ষার জন্য বড় আকারের চালকহীন আকাশযান (UAV), চালকহীন জাহাজ এবং পানির নিচে চলতে সক্ষম ড্রোন মোতায়েন করা হবে।

চীন ও জাপানের সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়ে আরও তিক্ত হয়েছে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। গত নভেম্বরে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, চীন যদি তাইওয়ান দখল করতে আক্রমণ চালায়, তবে জাপান সামরিকভাবে সেই লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়তে পারে। তাকাইচির এই অবস্থানের পর বেইজিং কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে টোকিওর ওপর চাপ বাড়াতে শুরু করে।

জাপানের এই বাজেট বৃদ্ধি এবং মহাকাশ প্রযুক্তির উন্নয়নকে ‘মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দেওয়া’ হিসেবে বর্ণনা করেছে চীন। গত বৃহস্পতিবার চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাং শিয়াওগাং এক সংবাদ সম্মেলনে জাপানকে সতর্ক করে বলেন, জাপানের বর্তমান আক্রমণাত্মক নীতি এবং আমেরিকার সাথে মিলে মহাকাশকে সামরিকীকরণ করার প্রচেষ্টা ভবিষ্যতে আরও একটি ‘পার্ল হারবার’ পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি করছে।

উল্লেখ্য, গত দুই বছরে টোকিও বেশ কিছু গোয়েন্দা স্যাটেলাইট ও জিপিএস সিস্টেম মহাকাশে পাঠিয়েছে, যাকে বেইজিং তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে। সব মিলিয়ে জাপানের এই রেকর্ড প্রতিরক্ষা বাজেট পূর্ব এশিয়ায় এক নতুন স্নায়ুযুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।